পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় কুয়াশায় ফেরি চলাচল ব্যাহত
ঘাটে অপেক্ষমাণ যানবাহনের দীর্ঘ সারি
পদ্মায় ঘন কুয়াশার কারণে রোববার (৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখছে কর্তৃপক্ষ। যে কারণে প্রতি রাতেই ঘাট এলাকায় নৌরুট পারাপার হতে আসা যাত্রী ও শ্রমিকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে বাড়ছে যানবাহনের চাপ। ৯ ঘণ্টা ফেরি বন্ধ থাকায় রাত থেকেই ঘাটে বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকের সারি দীর্ঘ হতে থাকে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও নৌরুট পারাপার হতে না পারায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসের সাধারণ যাত্রীরা। পাটুরিয়া ঘাটে ভালো মানের খাবার হোটেল, শৌচাগার, অনুন্নত পরিবেশ থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নারী ও শিশুরা।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকামুখী আরসিএল মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় যানবাহনের লম্বা সারি সৃষ্টি হয়েছে। ফেরি বন্ধ থাকায় বাসে রাত পার করেছেন যাত্রীরা। দীর্ঘ ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও নৌরুট পারাপার না হতে পারায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
বিজ্ঞাপন
পদ্মায় ঘন কুয়াশা থাকায় কয়েক দিন যাবৎ রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর নদীতে কুয়াশা বাড়তে থাকে।
পাটুরিয়ায় দুটি ট্রাক টার্মিনালে ৩০০ পণ্যবাহী ট্রাক ঘাট পারের অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে, পাটুরিয়ামুখী উথুলী সংযোগ মোড়ে আরিচামুখী সড়কে আরও দেড় শতাধিক সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক নৌরুট পারাপারে অপেক্ষায় রয়েছে। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি ঘাট এলাকায় এসে ফেরিতে উঠে যাচ্ছে।
খুলনাগামী হানিফ পরিবহনের বাসচালক জসিম হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরেই ঘন কুয়াশার কারণে রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এতে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে কার ভালো লাগে? কবে ঘাটে আমাগো ভোগান্তি কমব?
বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন সাতক্ষীরা পরিবহনের যাত্রী আলমাস মিয়া। চার দিনের ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ছুটির একদিন পাটুরিয়ায় কেটে গেল। গতকাল (বুধবার) রাত ২টার দিকে ঘাটে এসে শুনি ফেরি বন্ধ। ১০ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাসটি ফেরির দেখা পায়নি।
সোহাগ পরিবহনের যাত্রী হালিমা খাতুন বলেন, সিলেট থেকে রওনা হয়ে রাত তিনটায় পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছায়। ফেরি বন্ধ থাকায় দুই সন্তান নিয়ে বাসেই রাত পার করেছি। ঘাট এলাকায় ভালো শৌচাগার না থাকায় খুব ভোগান্তিতে পড়েছি। আল্লাহ জানেন কখন ফেরিতে উঠতে পারব। এই ভোগান্তি পরিত্রাণের জন্য সরকারের কাছে দ্বিতীয় পদ্মা ব্রিজের দাবি করছি।
ওই পরিবহনের আরেক যাত্রী নোমান খান বলেন, বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখতে যাচ্ছি। ঘাটের যে পরিস্থিতি, তাতে মনে হয় না আজ বাড়িতে পৌঁছাতে পারব।
পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় অপেক্ষমাণ ট্রাকচালক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা ট্রাক চালক তো মানুষই না। আমাগো ভোগান্তি ঘাট কর্তৃপক্ষ দেখে না। দুই দিন ধরে পারের অপেক্ষায় আছি। আজকে পার হতে না পারলে চাকরি থাকব না।
আরেক ট্রাকচালক মাসুদ রানা বলেন, ট্রাক চালাইয়া যে টাকা কামাই করি, তা ঘাটে খাবার খেতে চলে যায়। সারা বছরই আমাগো ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এখন ভোগান্তির মাত্রা বেড়ে গেছে। এইখান দিয়া সরকার একটা ব্রিজ করে দিলে আমাগো ভোগান্তি হইত না।
পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার বিআইডব্লিউটিসির বাণিজ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. সালাম হোসেন বলেন, পদ্মায় ঘন কুয়াশা থাকায় কয়েক দিন যাবৎ রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর নদীতে কুয়াশা বাড়তে থাকে। ঘন কুয়াশার কারণে ফেরির সামনের বাতির আলো অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। প্রতি রাতেই মাঝনদীতে ফেরি আটকা পড়ে। মূলত দুর্ঘটনা এড়াতেই রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
তিনি আরও বলেন, রাতে ফেরি বন্ধ থাকায় পরিবহন বাসের যাত্রী ও ট্রাক চালকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সকালে কুয়াশা কেটে গেলে যাত্রী ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনা করে পরিবহন বাস, জরুরি পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।
এসপি