নিহত তৌসিফুল ইসলাম মুন্না

গাজীপুর মহানগরীর গাজীপুরা এলাকার হাবিবুর রহমানের মালিকানাধীন বহুতল ভবনে পরিবার নিয়ে থাকতেন মিজানুর রহমান। ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই সকালে ১৪ বছরের ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তৌসিফুল ইসলাম মুন্নাকে বাসায় রেখে মা মোছা. হামিদা আক্তার মুকুল ছোট সন্তান তামিমকে স্কুলে নিয়ে যান। বাবা মিজানুর রহমান তার বনানীর কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

সকাল সোয়া ১০টার দিকে ছোট সন্তান তামিমকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরে বাসার দরজা বাইরে থেকে আটকানো অবস্থায় দেখতে পান হামিদা। পরে বাসায় প্রবেশ করে তৌসিফুল ইসলাম মুন্নার গলাকাটা রক্তাক্ত নিথর দেহ খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। পরবর্তীতে এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করে টঙ্গী পূর্ব থানায় হত্যা মামলা করেন তৌসিফুল ইসলাম মুন্নার বাবা মো. মিজানুর রহমান।

ঘটনার দুই বছর পর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার চকমোকামিয়া গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন (২৫), জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার জাকিরপাড়া গ্রামের উসমান আলী ছেলে মো. মোফাজ্জলকে (৩১) গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার (০৭ জুন) ভোররাতে মহানগরীর গাজীপুরা শিকদার মার্কেট এলাকা থেকে আনোয়ার হোসেনকে ও গাজীপুরার সুমন মার্কেট এলাকার মুক্তার হাজী বাড়ি থেকে মো. মোফাজ্জলকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের পর তাদের আদালতে হাজির করা হলে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্তার পাশাপাশি অন্যান্য আসামিদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা। ফাঁকা ফ্ল্যাটে স্বর্ণালংকার চুরি করার সময় মুন্না তাদের চিনে ফেলে। পরে চুরির অপরাধ ঢাকতেই মুন্নাকে তারা হত্যা করেন।

গ্রেফতার দুই আসামি

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনায় পর নিহত মুন্নার বাবা মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা করেন। টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ ক্লুলেস এ মামলাটি দীর্ঘ দুই মাস তদন্ত করেও কোনো কূলকিনারা করতে না পারায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলাটি গাজীপুর পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে।

দীর্ঘ ২২ মাস মামলাটি তদন্ত করে গত ৭ জুন ভোররাতে অভিযানে নামে গাজীপুর পিবিআই। অভিযানে আনোয়ার হোসেন ও মোফাজ্জলকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি জানান, ঘটনার দিন তৌসিফুল ইসলাম মুন্নার বাবা-মা বাসায় না থাকার সুযোগে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা চুরি করার উদ্দেশ্যে আসামিরা বাসায় প্রবেশ করতে চায়। তারা পরিচিত হওয়ায় মুন্না দরজা খুলে দিলে তারা ভেতরে যায়। পরে জিনিসপত্র চুরি করার সময় মুন্না আসামিদেরকে বাধা দেয় এবং ধস্তাধস্তি করে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আসামিরা মুন্নাকে খাটের ওপর ফেলে মুখ চেপে ধরে, পেটে চাকু দিয়ে আঘাত করে নাড়ি-ভুড়ি বের করে ফেলে এবং খাটের ওপর তাকে নির্মমভাবে গলা কেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে আসামিরা ওই ঘরের স্টিলের আলমারি ভেঙে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন চুরি করে পালিয়ে যায়।

গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, মূলত চুরি করার উদ্দেশ্যে বাসায় প্রবেশ করলেও আসামিদেরকে চিনে ফেলায় চুরির অপরাধ আড়াল করার জন্য তৌসিফুল ইসলাম মুন্নাকে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় জড়িত অন্যান্য আাসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

শিহাব খান/আরএআর