চিকিৎসা নিয়েছেন ২৬ জন
ঝালকাঠিতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, কিন্তু কেন?
ঝালকাঠি জেলায় বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত জেলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৬ রোগী। বর্তমানে হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক।
সদর হাসপাতালের পরিসংখ্যান সহকারী আশরাফুজ্জামান সুমন জানান, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত ২৬ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই জুন মাসে ভর্তি হন। সময়মতো চিকিৎসা পাওয়ায় তারা সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে কোনো ডেঙ্গুরোগী ভর্তি নেই।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
ডেঙ্গু আক্রান্তদের কেউ কেউ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও এসেছেন। কাঠালিয়া, রাজাপুর ও নলছিটি থেকেও রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
মশার বিস্তার ও জনস্বাস্থ্য সংকট
সরেজমিনে ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শহরের অলিগলি ও খোলা জায়গাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা পানি এখন এডিস মশার বংশবিস্তারের আদর্শ জায়গা হয়ে উঠেছে। ড্রেন, নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ, পুকুর পাড়, খাল ও পরিত্যক্ত খালি জায়গায় জমে থাকা পরিষ্কার পানি থেকে দ্রুত বিস্তার ঘটছে ডেঙ্গুর।
চাঁদকাঠি, কলেজ রোড, হাসপাতাল সড়ক, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, কোর্ট চত্বর ও পৌরসভা ভবনের আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা এবং নালা-নর্দমার পাশে পানি জমে থাকায় সেখান থেকে প্রতিনিয়ত এডিস মশার বিস্তার ঘটছে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি স্ত্রী এডিস মশা একবারে ২০০ থেকে ২৫০টি ডিম দেয়। মাত্র পাঁচ থেকে সাতদিনের মধ্যে ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা তৈরি হয়। জমে থাকা সামান্য পানিতেও এই মশা জন্ম নিতে পারে। ফলে শহরের ডোবা, ড্রেন ও বোতলের ঢাকনা কিংবা ফুলের টব— সবই এখন ঝুঁকির কেন্দ্রবিন্দু।
পৌরসভার খেয়াঘাট এলাকার শাকিল হাওলাদার রনি বলেন, ‘মশার উপদ্রব দিনদিন বাড়ছে। দিনে-রাতে মশার কামড়ে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। কোথাও নিয়মিত মশা নিধনের স্প্রে করা হচ্ছে না।’
কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি ও সচেতনতার আহ্বান
হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. আবুয়াল হাসান বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষার শুরুতেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ে। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে, বর্তমানে কেউ ভর্তি নেই। হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে, নতুন রোগী এলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করা হবে।’
ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস সিকদার। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু এখন বড় জনস্বাস্থ্য সংকট তৈরি করেছে। এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শুধু সরকার বা স্বাস্থ্য বিভাগ যথেষ্ট নয়, জনগণকেও নিজ নিজ ঘর ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। চারপাশে জমে থাকা পানি সরিয়ে দেওয়া, ছাদে বা ফুলের টবে পানি জমতে না দেওয়া এবং মশারি ব্যবহার করা— এগুলো এখন অত্যন্ত জরুরি।’
‘আমরা চাই প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় জনসচেতনতা গড়ে উঠুক। শিক্ষক, সাংবাদিক, মসজিদের ইমাম, জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের সবাইকে এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত হতে হবে। এখনই যদি আমরা উদ্যোগ না নেই, তাহলে সামনে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ২৬ রোগী। এটি পুরো জেলার হিসাব। বর্তমানে কেউ ভর্তি না থাকলেও আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছি। প্রতিটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।’
এমএআর