দুই দিনেই তলিয়ে গেল স্বেচ্ছাশ্রমের অর্ধকিলোমিটার বাঁধ
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় স্থানীয়দের সহায়তায় গড়া বালুর বাঁধের অর্ধকিলোমিটার মাত্র দুই দিনের ভাঙনে তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বুধবার (৯ জুন) দুপুরে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।
স্থানীয়রা জানান, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদী মরুভূমিতে পরিণত হলেও বর্ষার শুরুতে উজানের ঢলে ফুলে-ফেঁপে উঠে হিংস্র রূপ ধারণ করে তিস্তা নদী। প্রতিবছর তীর ভেঙে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে পথে বসছে তিস্তাপারের হাজারো পরিবার। জন্মলগ্ন থেকে তিস্তা নদী খনন না করায় সামান্য পানিতে দুই কূল উপচে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে। চরম দুর্ভোগে পড়ে তিস্তাপারের মানুষ। দুর্ভোগ লাঘবে নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
বিজ্ঞাপন
নিজেদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় গ্রামে স্থানীয় গ্রামবাসীর সহায়তায় প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি বালুর বাঁধ তৈরি করা হয়। স্থানীয়রা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধটি নির্মাণ করেন। বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় আশায় বুক বাঁধে নদীতীরবর্তী কুটিরপাড়, বালাপাড়া ও চৌরাহা এলাকার হাজারো পরিবার।
গত দুই দিনে প্রায় ১০টি পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। তারা তাদের ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র উঁচু রাস্তায় বা অন্যের উঠানে স্তূপাকারে রেখেছেন। জমির অভাবে তারা ঘর তুলতে পারছেন না। বাঁধটি এবং পাশের গ্রাম তিনটি রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে ১০ হাজার জিও ব্যাগ প্রয়োজন বলে স্থানীয়দের দাবি।
কুটিরপাড় এলাকার সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গ্রামবাসী সহায়তা করে বালুর বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। বাঁধটি হওয়ায় আশা করেছি এ বছর আর নদীভাঙনের মুখে পড়তে হবে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতে পারব। কিন্তু বর্ষার শুরুতে পানির চাপে দুই দিনের ব্যবধানে বালুর বাঁধটি বেশির ভাগ অংশই বিলীন হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বাঁধটি বিলীন হলে আমার বাড়ি নদীর মুখে পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। দুই আগেও যেখানে আমি ঘুমাতাম। আজ সেখানে নদীর স্রোত বইছে। বাকি অংশটুকু রক্ষা করা সম্ভব না হলে বর্ষার আগে কুটিরপাড়, চৌরাহা ও বাদিয়ারটারী বিলীন হতে পারে।
ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, বালুর বাঁধটির অর্ধের বেশি বিলীন হয়েছে। বাকিটুকু রক্ষা করতে জিও ব্যাগ প্রয়োজন। যার চাহিদা পাঠাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। অনেক বাড়ি নদীভাঙনের মুখে পড়েছে। তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে ভাঙন রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ঢাকা পোসন্টকে বলেন, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে নগদ অর্থ ও ঢেউটিন মজুত আছে। ইউএনওরা প্রয়োজনে তা বিতরণ করবেন। বালুর বাঁধটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। নদীভাঙনের সর্বশেষ তথ্য সার্বক্ষণিক মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হচ্ছে।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এনএ