দিগন্তজোড়া সরিষাখেত। আমন ধান কাটার পর কৃষিজমি অনেকটা অলস মাঠে পরিণত হয়। সেই ফাঁকা মাঠ থেকে বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়েছে কৃষকের। এখন চলছে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ। আমন আর বোরো চাষের মধ্যবর্তী এই সময়ে সরিষা চাষ করে যেমন মাঠের উর্বরতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে, তেমনি বাড়িতে আয়ের সুযোগ হয়েছে।

এ বছর জেলার ২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৩২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ সম্ভব হয়েছে, যা গত বছরের প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর জেলাজুড়ে সরিষা আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৩৪৭ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত সরিষার মধ্যে রয়েছে বারি সরিষা ১৪, ৯, ১৫ ও ১৭ এবং বিনা সরিষা ৪ ও ৯ জাতের।

মৌলভীবাজারের বিন্নার হাওরে এবার আঠারো বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকেরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার একটু বেশি আবাদ হয়েছে। সরিষাখেতে ইতিমধ্যে বীজও আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। এবার জমির পর জমিতে সরিষার আবাদ দেখা গেছে। মাঠের পর মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ফুলে ফুলে মধু আহরণে ভিড় করছে দলবদ্ধ মৌমাছি। অনেক জমিতেই ফুল শেষ হয়ে বীজ দেখা গেছে। ভালো বীজের আশায় কৃষকরা নিয়মমাফিক পানি সেচ দিচ্ছেন জমিতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার ২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৩২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ সম্ভব হয়েছে, যা গত বছরের প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর জেলাজুড়ে সরিষা আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৩৪৭ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত সরিষার মধ্যে রয়েছে বারি সরিষা ১৪, ৯, ১৫ ও ১৭ এবং বিনা সরিষা ৪ ও ৯ জাতের।

সূর্যের কিরণ সরিষাখেতের শোভাবর্ধন বাড়িয়ে দিয়েছে

চাষি রাজা মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, জমি চা দেয়ার পর সার দিয়েছি পরে বীজ ছিটিয়েছি। পানির সেচও ভালো দিচ্ছি। গত বছর প্রথমবার হওয়ায় ভালো চাষ করতে পারি নাই, সারও ভালো দিতে পারি নাই। এবার সারও ভালো দিয়েছি, চাষও ভালো করেছি। ফসলটাও ভালো হয়েছে। আরো ২০ দিন পরেই গাছে বিজ দিবে। আমন ধান ঘরে তুলে সরিষা লাগিয়েছি, আড়াই মাস পর আবার বোরো চাষ করতে পারব।

তিনি আরো বলেন, আগে আমাদের ময়-মুরব্বিরা সরিষার তেল খেতেন। এটা ভালো তেল। সরিষা তেলে ওপর আর কোনো তেলই নেই। এখন অনেক জাতের তেল বের হয়েছে। কিন্তু সরিষা তেলের ওপর কোনো তেলই হতে পারে না।

আজমেরু গ্রামের চাষি জাহিদ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরিষা চাষ এবার গত বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে। গত বছর আমরা পানির সেচ দিয়েছিলাম লাগোয়া ভাবে কিন্তু এবার দিচ্ছি স্প্রে করে। যার কারণে ফলন ভালো হচ্ছে। গত বছর অনেক বিজই গজিয়ে ওঠেনি। এবার অধিকাংশ বীজে গাছ হয়েছে। এখন পানি সেচ দিচ্ছি। আশা করি ভালো ফলন হবে।

মৌলভীবাজার জেলায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধির জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবছর সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে আমরা সরিষার অবাদ বৃদ্ধি করছি, যাতে ভোজ্যতেলের যে চাহিদা, সেটা পূরণ করতে পারি। একই সঙ্গে সরিষা থাকলে মধু চাষও বাড়বে।

কাজী লুৎফুল বারী, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধির জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবছর সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে আমরা সরিষার অবাদ বৃদ্ধি করছি, যাতে ভোজ্যতেলের যে চাহিদা, সেটা পূরণ করতে পারি। একই সঙ্গে সরিষা থাকলে মধু চাষও বাড়বে।

তিনি বলেন, যেসব এলাকায় সেচের সুবিধা আছে, আমরা চেষ্টা করছি সেসব এলাকায় স্বল্প মেয়াদের আমন সফল। যেমন আমরা ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে আমন ফসল তুলে, বোরোর মাঝখানে যে সময়টুকু, সেই সময়টুকুর মধ্যে সরিষা চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কৃষকরা বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।

এনএ