খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) আরটি পিসিআর মেশিনে ৩৫ দশমিক ৯০ শতাংশ করোনা শনাক্ত হয়েছে। ৩৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ১৩৫ জনের করোনা শনাক্ত এসেছে। এদিকে শুক্রবার (১১ জুন) রাতে খুলনা করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডাক্তার মেহেদী নেওয়াজ জানান, খুমেক পিসিআর ল্যাবে ৩৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৩৫ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। এর মধ্যে খুলনার ৩৩২ জনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১১৬ জনের। এ ছাড়া বাগেরহাটের ১৩ জনের, সাতক্ষীরার ৩ জনের যশোরের ২ জনের ও পিরোজপুরের ১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

খুমেকের ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, মোট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৩৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। যার মধ্যে খুলনার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৩৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় খুলনা জেলা ও মহানগরে করোনা শনাক্তের হার ছিল ৩৫ শতাংশ।

খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা জানান, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা জেলা ও মহানগরীতে ৪৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ১৫৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, যা মোট নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৩৫ শতাংশ।  

খুলনা করোনা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত পৌনে ৭টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঈনুদ্দিন শেখ (৬৫) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বাগেরহাটের মোংলা জয়মনি এলাকার মৃত. নরজেম আলী শেখের ছেলে। গত ৯ জুন তিনি খুলনা করোনা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে খুলনার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১৪৩ জন। এ কারণে শয্যা খালি সাপেক্ষে নতুন রোগী ভর্তি করা হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

খুলনা করোনা হাসপাতালের ফোকাল পারসন এবং খুমেক হাসপাতালের আরএমও সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, এখানে ধারণক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। শয্যা খালি হওয়া সাপেক্ষে নতুন রোগী ভর্তি নেওয়া হবে। সকালে রেড জোনে ৬১ জন, ইয়েলো জোনে ৩০, হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) ৩২ জন ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ২০ জন চিকিৎসাধীন ছিল।

শুক্রবার জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় জানানো হয়, খুলনা করোনা রোগীর চিকিৎসার শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হবে। সে ক্ষেত্রে সদর হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অতিসত্বর যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া সভায় জাননো হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে সেখানে প্রতিদিন ৫০০ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা যাবে।

সভায় আগামী রোববার (১৩ জুন) থেকে খুলনাজুড়ে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে বিকাল পাঁচটা পর কোন দোকান, শপিংমল, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি খোলা রাখা যাবে না। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হয়ে অযথা ঘোরাঘুরি করতে পারবে না। ইজিবাইক চলবে অর্ধেক এবং অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নিয়ে। কাঁচাবাজার ও ওষুধের দোকান এই বিধিনিষেধ আওতামুক্ত থাকবে।

ওই সভায় খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, গত এক সপ্তাহ খুলনার কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করে সংক্রমণ প্রতিরোধে কোনো ভালো ফল পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে সমগ্র জেলায় বিধিনিষেধ আরোপ ও তা বাস্তাবায়ন করতে না পারলে খুলনার করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো যাবে না। 

তিনি রাস্তাঘাটে অযথা জটলা করে আড্ডা দেওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা পালনের জন্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।

মোহাম্মদ মিলন/এনএ