বদরউদ্দিন আহমদ কামরান

বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। যাকে সিলেটের মানুষ এক নামে ‘জনতার কামরান’ হিসেবে চেনেন। সাধারণ মানুষের যেকোনো দুঃখ-দুর্দশায় এগিয়ে যেতেন তিনি। আর এই ‘জনতার কামরানকে’ হারানোর এক বছর পূর্ণ হলো আজ। আজও সকলের হৃদয়ে রয়েছেন তিনি। 

২০২০ সালের ২০২০ সালের ১৫ জুন সকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান। তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার।

এ উপলক্ষে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এছাড়া পরিবার ও বিভিন্ন সংগঠনও তার মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলছেন, শ্রদ্ধেয় কামরান ভাই অত্যন্ত সদালাপী মানুষ ছিলেন। জনতার কাছের একজন নেতা ছিলেন তিনি। আমরা সকলেই তাকে পছন্দ করতাম। আজ তিনি নেই, কিন্তু এখনও বিশ্বাস হয় না।

মেয়র আরিফ আরও বলেন, কামরান ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুন ছিল- তিনি সর্বদাই হাস্যজ্জ্বল থাকতেন। কখনোই তিনি রাগান্বিত হতেন না। সত্যিকার অর্থেই তিনি জনদরদী মানুষ ছিলেন। আমি তার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

এদিকে কামরানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মৃতিচারণ করেছেন। করছেন অকালে চলে যাওয়া কামরানের গুণকীর্তন। সবাই বলছেন, কামরান চলে যাওয়ায় সিলেটেরই ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে সিলেটবাসীর।

বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি সিলেট নগরীর চরারপাড় মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বশির উদ্দিন আহমেদ ও মাতার নাম নুরুননেসা বেগম লাকলেন। তিনি দুর্গা কুমার পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর তিনি ১৯৭১ সালে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য মুরতি চাঁদ কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৬ সালে তিনি মদন মোহন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ১৯৭৩ সালে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় সিলেটের ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তিনি সিলেট পৌরসভার কনিষ্ঠ কমিশনার হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি সিলেট পৌরসভায় কমিশনার হিসাবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সিলেট নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে তিনি হন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন।

২০০৩ সালের মার্চ মাসে মুহাম্মদ আবদুল হককে পরাজিত করে তিনি সিলেট মহানগরের মেয়র হন। ২০ হাজারের বেশি ভোটে কামরান বিজয়ী হন। ২০০৫ সালে, একটি টেনিস কোর্টের উদ্বোধন করতে গেলে, হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বাংলাদেশ সদস্যরা তাকে হত্যার প্রয়াসে তার দিকে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে হরকত উল জিহাদ-আল-ইসলামী বাংলাদেশের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে তাকে হত্যার চেষ্টা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

২০০৭ সালে তিনি সিলেট কিচেন মার্কেট ঘুষ মামলায় গ্রেফতার হন। মামলায় জামিন পেলেও কামরানকে জরুরি ক্ষমতা বিধিমালায় দায়ের করা অন্য মামলায় আটক করা হয়।

২০০৮ সালে কারাবন্দি অবস্থায়, মেয়র নির্বাচনের প্রতিযোগিতার জন্য তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। তখন মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় বার নির্বাচনে জয় লাভ করেন। ভোটাররা তাকে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা অন্যায়ভাবে আটক হিসেবে দেখেছিলেন। নির্বাচনে তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৮৩ হাজার বেশি ভোট পেয়েছিলেন। ২০০৮ সালের ১৭ আগস্ট তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। কামরান ২০১৩ ও ২০১৮ সালের মেয়র নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন।

২০০২ সালের সম্মেলনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৫ এবং ২০১১ সালের সম্মেলনে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন।

বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান আসমা কামরানকে বিয়ে করেন। তিনি দুই পুত্র এবং এক কন্যার জনক। তারা হলেন- আরমান, আশা ও আদনান।

বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান ও তার স্ত্রী আসমা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্য ভ্রমণে যান ও ৫ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে আসার পর কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরেও কামরানকে ঢাকা ও সিলেটের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায়। এরপর তিনি কোয়ারেন্টাইন লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা চান।

২০২০ সালের ৫ জুন কোভিড-১৯ পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর তাকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার অবনতি হলে, ২০২০ সালের জুনে তাকে বিমান অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ১৫ জুন ২০২০ সালে রাত তিনটায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। পরে তাকে মানিকপীর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

তুহিন আহমদ/এইচকে