হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাজার উদ্বোধন, থাকছে সদাই অ্যাপ
হাঁড়িভাঙ্গা আম
রংপুরের সুমিষ্ট ও আঁশহীন সুস্বাদু হাঁড়িভাঙ্গা আম বাজারে উঠেছে। যদিও কৃষি বিভাগ থেকে বলা হয়েছে- পরিপক্ব হাঁড়িভাঙ্গা আমের জন্য ২০ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এর পরই শুরু হবে গাছ থেকে আম পাড়া। তবে চাষি ও ব্যবসায়ীদের দাবি- আম পরিপক্ব হওয়ায় নিরুপায় হয়ে বাগান থেকে আম সংগ্রহ করছেন তারা। ইতোমধ্যে হাটে-বাজারে আম বিক্রি শুরুও হয়েছে।
এবারই প্রথম হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাজারজাত ও ভোক্তা-বিক্রেতার জন্য থাকছে ‘সদাই অ্যাপ’ সুবিধা। এছাড়াও হাঁড়িভাঙ্গার রাজধানীখ্যাত মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ হাটের বাহিরে রংপুর নগরেও চালু করা হয়েছে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাজার। শনিবার (১৯ জুন) বিকেলে নগরের লালবাগ দর্শনা মোড় এলাকায় হাঁড়িভাঙ্গা আমের নতুন বাজারের উদ্বোধন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এ বাজার থেকে দেশের যে কোনো স্থানে আম পাঠাতে পারবেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এছাড়া আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা যাতে সঠিক দামে হাঁড়িভাঙ্গা আম বাজারজাত করতে পারেন এজন্য সাহায্য করবে সদাই নামের একটি মোবাইল অ্যাপ।
রংপুর কৃষি বিপণন অধিদফতরের উপপরিচালক অনোয়ারুল হক জানান, রোববার (২০ জুন) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গাছ থেকে হাঁড়িভাঙ্গা আম পাড়া শুরু হবে। এজন্য চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে এবং হাঁড়িভাঙ্গা বাজারে ২০ জুন থেকে সরবরাহ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে অনেকেই বেশি দাম পাওয়ার আশায় আগাম আম পাড়া শুরু করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এবার রংপুরে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে চিন্তিত চাষি ও ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাজারে শ্রেণি ভেদে বর্তমানে হাঁড়িভাঙ্গা আম ১২০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। পদাগঞ্জ হাট, রংপুর সিটি বাজার, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন বাজারে হাঁড়িভাঙ্গা আমের দেখা মিললেও নেই ক্রেতাদের তেমন উপস্থিতি। আবারো করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হওয়ায় আমের দরপতনের শঙ্কা তাড়া করছে চাষিদের।
পদাগঞ্জহাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, থরে থরে আম সাজিয়ে রেখেছেন চাষি ও বিক্রেতারা। আমের সাইজ দেখে ক্রেতারা দরদাম করছেন। পছন্দের আম একটু বেশি দাম হলেও ক্রেতাদের ক্রয় করতে দেখা গেছে। অনেকে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাজার ঘুরে দর কষাকষি করে ভালো আম কেনার চেষ্টা করছেন। তবে হাটে ক্রেতা উপস্থিতি কম থাকায় আম বিক্রি করতে না পেড়ে হতাশায় ভুগতে দেখা গেছে অনেক ব্যবসায়ী ও আম চাষিদের।
আমের মৌসুমে পদাগঞ্জে প্রায় শত কোটি টাকার মতো আম কেনাবেচা হয়ে থাকে। প্রতিবারের মতো এবারও সেখানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আম পাঠানোর উদ্দেশ্যে অস্থায়ীভাবে কুরিয়ায় সার্ভিস সেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এজন্য কেজি প্রতি আমে ১২/১৫ টাকা করে সার্ভিস চার্জ নিচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
কৃষি বিপণন অধিদফতরের উপপরিচালক অনোয়ারুল হক ঢাকা পোস্টকে জানান, মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জহাট ছাড়াও রংপুর নগরের লালবাগ দর্শনা মোড়ে হাঁড়িভাঙ্গা আমের নতুন বাজার করা হয়েছে। এছাড়াও কৃষকের উৎপাদিত আম সঠিক দরে বিক্রি নিশ্চিত করতে সদাই নামে একটি মোবাইল অ্যাপ সাহায্য করবে। কোনো আড়তদার, কমিশন এজেন্ট, উদ্যোক্তা কেউ এখান থেকে প্রতারণার শিকার হওয়ার সুযোগ নেই। এই অ্যাপ সরাসরি মনিটরিং করবে কৃষি বিপণন অধিদফতর।
সদাই অ্যাপ সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রাথমিক পর্যায়ে অনলাইনে ব্যবসায় আগ্রহী কিছু তরুণকে অ্যাপ ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই অ্যাপে সহজেই যে কেউ বিজ্ঞাপন দিয়ে অনলাইনে আম বিক্রি করতে পারবেন। ক্রেতার পছন্দ ও দামদরের ওপর কেনাবেচা হবে। অর্ডার দিলেই পণ্য ঠিকঠাক পৌঁছে যাবে। এটি কৃষি বিপণন অধিদফতর নিজে তত্ত্বাবধান করবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এবার মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরাহাট, পদাগঞ্জ, মাঠেরহাট ও বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সব জাতের আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে রয়েছে হাঁড়িভাঙ্গা আম। জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙ্গা আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৯২৫ টন।
জেলার মধ্যে বদরগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ৪০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এছাড়াও রংপুর মহানগর এলাকায় ২৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৬০ হেক্টর, কাউনিয়ায় ১০ হেক্টর, গঙ্গাচড়ায় ৩৫ হেক্টর, মিঠাপুকুরে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর, পীরগঞ্জে ৫০ হেক্টর, পীরগাছায় ৫ হেক্টর ও তারাগঞ্জ উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙ্গা আম ৬০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। একেকটি পরিপক্ব হাঁড়িভাঙ্গা আমের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে ৪০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর