বন্যায় চাষযোগ্য জমি ক্ষতিগ্রস্ত, আশানুরূপ ফলন না এলেও প্রতিবছরের মতো এ বছরও সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ মাষকলাই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এ বছর জেলার শিবগঞ্জ ও সদর উপজেলার পদ্মাতীরবর্তী চরাঞ্চলের ২ হাজার ৭০৩ হেক্টর মাষকলাইয়ের জমি বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে তলিয়ে যায়।

কৃষি বিভাগ বলছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কম হয়েছে। অন্যদিকে কৃষকরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এ বছর ফলনও অনেক কম হয়েছে। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলের মাষকলাই কয়েক দিন আগে কৃষকের ঘরে উঠে গেলেও চরাঞ্চলের মাষকলাই নাবি হওয়ায় এখনো বেশির ভাগই জমিতে রয়েছে। প্রণোদনার আওতায় জেলায় দেশের সর্বোচ্চসংখ্যক ৩৭ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর মাষকলাই চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২২ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে। তবে বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চাষাবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৯৯২ হেক্টর জমিতে। জেলায় প্রায় ১৯ মেট্রিক টন মাষকলাই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

সদর উপজেলার নারায়ণপুরের কৃষক আব্দুল আহাদ জানান, এ বছর মহার (ঘন কুয়াশা) কারণে মাষকলাইয়ের ফুল থেকে ফল হওয়ার সময়েই নষ্ট হয়ে যায়। আগাম যারা চাষ করেছে, তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। তবে পরে (নাবি) যারা চাষ করেছে, তাদের কিছুটা হলেও ভালো ফলন হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মাষকলাইয়ের দামেও। অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক দাম বেশি।

সারা দেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাষকলাইয়ের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। সারা দেশের সবচেয়ে বেশি মাষকলাই উৎপাদন হয় এই জেলায়। অন্যদিকে, কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকার কৃষকের উন্নয়নে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে অঞ্চলভিত্তিক প্রণোদনার অংশ হিসেবে মাষকলাই বীজ ও সারে এই জেলাতেই সবচেয়ে বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এ বছর ফলন কম হলেও এই উদ্যোগ জেলায় মাষকলাই উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিমল কুমার প্রামাণিক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চরবাগডাঙ্গা এলাকার সাজাহান আলী বলেন, এ বছর ১২ বিঘা মাষকলাই চাষ করেছি। জমি থেকে পাকা মাষকলাই ওঠানোর কাজ চলছে। খুবই খারাপ অবস্থা মাষকলাইয়ের। আবহাওয়ার কারণে দানা (ফলন) নেয়। অন্যান্য বছর বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৫ মণ ফলন হলেও, এ বছর ৩ মণের বেশি হয় না। আগাম জাতের মাষকলাইয়ের লতা বড় হয়েছে কিন্তু ফলন হয়নি। তবে নাবি জাতের মাষকলাইয়ের মোটামুটি ভালো ফলন হয়েছে।

ফলন কম হওয়ায় প্রভাব পড়েছে বাজারে। মাষকলাই বিক্রেতা তরিকুল ইসলাম জানান, অন্যান্যা বছর এ সময় মাষকলাই বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। অথচ ফলন খারাপ হওয়ায় এবার ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে এই দাম আরও বেশি বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, সামনে আরও শীত আসছে। আর এই শীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে ও বাড়িতে সকাল-সন্ধ্যা ভাত ছেড়ে মাষকলাইয়ের রুটি খায় বেশিরভাগ মানুষ। এ ছাড়া কুমড়ার বড়ি দেওয়া কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হলে মাষকলাইয়ের দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাক বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বিমল কুমার প্রামাণিক ঢাকা পোস্টকে জানান, সারা দেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাষকলাইয়ের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। সারা দেশের সবচেয়ে বেশি মাষকলাই উৎপাদন হয় এই জেলায়। অন্যদিকে, কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকার কৃষকের উন্নয়নে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে অঞ্চলভিত্তিক প্রণোদনার অংশ হিসেবে মাষকলাই বীজ ও সারে এই জেলাতেই সবচেয়ে বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এ বছর ফলন কম হলেও এই উদ্যোগ জেলায় মাষকলাই উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

উল্লেখ্য, জেলায় ৩৭ হাজার মাষকলাই চাষিকে বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে রবি পুনর্বাসনের আওতায় ৮ হাজার ৫০০ কৃষককে, হাইব্রিড মাষকলাই ২৮ হাজার ৫০০ কৃষকের মাঝে বীজ, ডিএপি ও এমওপি সার বিতরণ করা হয়েছে।

এনএ