চিংড়িগুলো জনসম্মুখে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়

ফেনীতে জাটকা ইলিশ বিক্রি ও চিংড়িতে জেলি মেশানোর দায়ে চার মাছ বিক্রেতাকে সাতদিন করে কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) ফেনীর পৌর মৎস্য আড়ত ও সুলতান মাহমুদ হকার্স মার্কেটে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে।

ফেনী সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ মোস্তফা জামান জানান, দীর্ঘদিন ফেনীর বিভিন্ন মৎস্য আড়ত ও মাছ বাজারে চিংড়িতে জেলি ও ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করে আসছে একটি চক্র। শুধু মাথায় নয় রাসায়নিক মেশানো হয় চিংড়ির পুরো শরীরে। এসব চিংড়ির স্বাদও আলাদা। সিলিকা জেলি মানবদেহের রেচনতন্ত্রের ক্ষতি করে মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে। এমন অসাধুতার ফলে চিংড়ি এখন রপ্তানিতেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, বাজারে অহরহ নিষিদ্ধ জাটকা বিক্রি করা হচ্ছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ভূঞার নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ফেনী পৌর মৎস্য আড়তের শাহী মাছের আড়ৎ থেকে ৩০ কেজি জাটকা উদ্ধার করা হয়। এ জন্য দোকানিকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও সাতদিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। অভিযানে লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করার দায়ে মা মাছের আড়তের শহীদুল ইসলাম মুন্সিকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও সাতদিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ফেনী শহরের পৌর সুলতান আহাম্মদ হকার্স মার্কেটে অভিযান চালিয়ে খুচরা মাছ বিক্রেতা শাকিলের কাছ থেকে ৩৫ কেজি ও আজিমের কাছ থেকে ১৫ কেজি জেলি মিশ্রিত চিংড়ি উদ্ধার করে। তাদেরকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা ও সাতদিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। 

গত সপ্তাহেও ফেনীর পৌর মৎস্য আড়তে দেড়শ কেজি সিলিকা জেলযুক্ত চিংড়ি জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানা গুনতে হয় চারটি কমিশন এজেন্টকে। তবে তাদের দাবি, এতে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

চিংড়ি সরবরাহকারীদের একজন জানান, মূলত খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা থেকে ফেনীতে চিংড়ি আমদানি করেন আড়তদাররা। দেখতে এসব চিংড়ি মনকাড়া হলেও প্রায় সব মাছেই থাকে ভেজাল। ভেজালবিরোধী এসব অভিযান মাঝে মধ্যেই পরিচালিত হয়। জরিমানা করা হয়, ভেজাল চিংড়ি বাজেয়াপ্তও হয়, কিন্তু ভেজাল বন্ধ হয় না। খুলনা থেকে সরবরাহ করা মাছে সবচেয়ে বেশি ভেজাল দ্রব্য মিশ্রিত থাকে। ঘের এবং ঘের থেকে বের হলেই একটি চক্র চিংড়িতে ভেজাল দ্রব্য মেশায়।

শহরের মোস্তফা ফিশিংয়ের মালিক হাসান জানান, মাছের আকার ও ওজনের ওপর ভিত্তি করে চিংড়ির দাম নির্ধারিত হয়। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের ফলে মাছের ওজন বাড়ে, সুদৃশ্য হয়।  

আদর্শ মাছের আড়তের নুরুল ইসলাম জেলি যোগের সুবিধা প্রসঙ্গে উদাহরণ দিয়ে বলেন, ১২টির স্থলে ১০টি চিংড়িতে এক কেজি হয়ে যায়। এতে কেজি প্রতি বাড়তি দাম এবং ওজন বাড়ার ফলে বাড়তি আয় হয়। লাভের পরিমাণ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কমিশন এজেন্ট বলেন, ডিম ছেড়ে দেওয়ার পর চিংড়ির মাংস কমে যায় এবং ক্ষীণ হয়ে যায়। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করলে এগুলো হৃষ্টপুষ্ট দেখায় এবং মাছে কালচে ভাব আসে না। ওজন বেড়ে যায়।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেনী মৎস্য আড়ত সমিতির এক নেতা জানান, ঘেরের আশপাশেই চিংড়িতে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর কাজ হয়। শ্রমিকরা ঘণ্টায় ৪০ টাকা দরে এ কাজ করেন।  

অভিযানে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম, সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ মোস্তফা জামানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে জব্দকৃত জাটকা দুটি এতিমখানায় বিতরণ ও চিংড়িগুলো জনসম্মুখে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। 

আরএআর