ইউএনওর কাছ থেকে দোকান বুঝে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন নিলুফা বেগম

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার চরখামের গ্রামের নিলুফা বেগমের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছিলেন না। ২০ বছর ধরে নানা প্রতিবন্ধকতা ও ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। অবশেষে সরকারি উদ্যোগে তাকে দেওয়া হয়েছে একটি দোকানঘর। এটা পেয়েই যেন খুশি আর ধরে না তার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছ থেকে দোকান বুঝে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন নিলুফা বেগম।

ঘর পেয়ে আনন্দিত নিলুফা জানান, মৃত্যুর আগে অভিশপ্ত জীবনের ইতি টানতে পারাই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। অর্থ আর সুযোগের অভাবে তা এত দিন সুখ অধরা থাকলেও সরকারি সহায়তায় তিনি এখন ব্যবসায়ী। এ ব্যবসার মাধ্যমে তিনি এখন ভালোভাবে চলতে পারবেন।

একই উপজেলার পাকিয়াব গ্রামের নাজিম উদ্দিন বলেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে তিনি ভিক্ষা করছিলেন। তবে সরকারিভাবে তাকে দোকান দিয়ে সহায়তায় করায় এখন তিনি আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবেন। নতুনভাবে বাঁচার আশা দেখবেন। ক্ষুদ্র দোকানের মাধ্যমে তার যে আয় হয়, তাতেই তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাকি জীবন কাটাতে চান।

গাজীপুর জেলা সমাজসেবা বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দুই বছর আগে ভিক্ষুকমুক্ত গাজীপুর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য প্রাথমিক অবস্থায় জেলার ৫টি উপজেলায় জরিপ করে ভিক্ষুক বাছাই করা হয়। জরিপে কালিয়াকৈরে ৫৭৮ জন, কালিগঞ্জে ২৩৬ জন, শ্রীপুরে ৪৬৬ জন, কাপাসিয়ায় ৭৮ জন, গাজীপুর সদরে ১৭০ জনসহ মোট ৯৫০ জন ভিক্ষুক বাছাই করা হয়।

পরে তাদের এ পেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারিভাবে ভিক্ষুক পুনর্বাসন করতে সাত লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। এর মধ্যে গাজীপুর সদরে ৮ জন, কাপাসিয়ায় ৬ জন, কালিগঞ্জে ৩ জন, কালিয়াকৈরে ৫ জনকে মুদি দোকান তৈরি করে দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনেককেই সহায়তার মাধ্যমে অভিশপ্ত পেশা ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বের করে কাজের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় শ্রীপুরে ১২ জন ভিক্ষুককে ছাগল পালনের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে ছাগল প্রদান করা হয়। সব মিলিয়ে ২৮ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

গাজীপুর সমাজসেবা বিভাগের উপপরিচালক এস এম আনোয়ারুল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জরিপে থাকা সবাইকে ধাপে ধাপে পুনর্বাসিত করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরনির্ভরশীলতা দূরীকরণের নির্দেশনা রয়েছে। তাই ভিক্ষাবৃত্তির পেশায় নিয়োজিতদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে।

কাপাসিয়া ইউএনও ইসমত আরা বলেন, কাপাসিয়া উপজেলায় সরকারি সহায়তার মাধ্যমে ছয় ভিক্ষুককে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে সরিয়ে এনে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বাজারগুলোয় ক্ষুদ্র দোকান তৈরি করে মালামাল কিনে দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে যে আয় হবে, তা দিয়ে সংসারে খরচ করবেন। আমরা যে বরাদ্দ পাচ্ছি, তা দিয়ে কাজ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি তালিকায় থাকা অনেককেই ভিক্ষাবৃত্তির অভিশাপ থেকে বের হয়ে আসার জন্য কাউন্সেলিং করছি।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ও নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সারাদেশের মতো গাজীপুরকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যেই আমরা কাজ শুরু করেছি। অনেকেই এখন সরকারি সহায়তার মাধ্যমে ভিক্ষা ছেড়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে উঠছে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ।

শিহাব খান/এনএ