বাগেরহাটে আট তরুণের প্রশংসনীয় উদ্যোগ
‘বিনা অক্সিজেনে ঝরবে না কোনো প্রাণ’ স্লোগানে অক্সিজেন সংকট দেখা দিলেই তারা ছুটে যাচ্ছেন মুমূর্ষু মানুষের বাড়িতে। অক্সিজেন সরবরাহ করতে গিয়ে সংগঠনটির তিন সদস্য করোনায় আক্রান্তও হয়েছেন। নির্ধারিত নম্বরে ফোন বা অক্সিজেন ব্যাংকের ফেসবুক পেজে সহযোগিতা চাইলে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন রোগীর বাড়িতে।
বাগেরহাটে এমনই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন আট তরুণ। বাগেরহাট সদর উপজেলা, ফকিরহাট, মোরেলগঞ্জ এবং খুলনার রূপসা এলাকায় এখন পর্যন্ত ১৫ মানুষের জন্য অক্সিজেন নিয়ে গিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা ও কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়া (বর্তমানে সুস্থ) জনি, রেজোয়ান ও চয়ন বলেন, অক্সিজেনের অভাবে মানুষের কষ্ট দেখে ১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা কয়েকজন বন্ধু অক্সিজেন ব্যাংক চালু করি। এরপর থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি মুমূর্ষু রোগীর অক্সিজেনের অভাব মেটাতে। গভীর রাতেও একাধিক মানুষের বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছি আমরা।
ফকিরহাটের ভট্রবালিয়াঘাটা এলাকা থেকে অক্সিজেন সহায়তা নেওয়া মহসীন মোড়ল বলেন, একদিন রাতে আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তখন কোনো উপায় না পেয়ে চুলকাঠী অক্সিজেন ব্যাংকের সদস্যদের ফোন করি। তারা দ্রুত অক্সিজেন নিয়ে ছুটে আসেন। পরে একটু সুস্থ হলে আমার স্ত্রীকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করি।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঢুলিগাতি গ্রামের রোগী সৈয়দ রিজভী আহমেদ শিপন বলেন, চুলকাঠী অক্সিজেন ব্যাংকের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আমি খুব অসুস্থ ছিলাম। আমার পরিবারের এক সদস্য ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে তারা এসে আমাকে অক্সিজেন সহায়তা দিয়েছেন। আল্লাহর রহমতে আমি এখন সুস্থ।
বিজ্ঞাপন
চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়কারী জাকারিয়া হোসাইন শাওন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে সেবা দিতে। অক্সিজেনের খুব সংকট বর্তমানে। চলতি বছরের পয়লা মে থেকে আমরা অক্সিজেন সহায়তা দিয়ে আসছি। এখন পর্যন্ত আমরা সদর উপজেলা, ফকিরহাট, মোরেলগঞ্জ ও খুলনার রূপসা এলাকার ১৫ জন মানুষের জন্য অক্সিজেন নিয়ে গিয়েছি। এর মধ্যে চারজনের অক্সিজেন প্রয়োজন হয়নি। আমাদের অক্সিজেন ব্যাংকের নম্বর: ০১৭১৪-৯৭৭৮০২, ০১৯১৩-০১৩৩১৭, ০১৭১১-৩০৯৪৮৩।
তিনি বলেন, একজন মুমূর্ষ রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য সিলিন্ডারের পাশাপাশি একটা ফুল সেটের প্রয়োজন হয়। একটি সেট তৈরি করতে আমাদের প্রায় ১৭ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। আমাদের দুটি সেট রয়েছে। একটি সেট রিফিল করা থাকলে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ১ হাজার ৫০০ মিনিট অক্সিজেন দেওয়া যায়। তবে যদি কারও অক্সিজেনের প্রয়োজন বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায়।
জাকারিয়া হোসাইন শাওন বলেন, এই সিলিন্ডারগুলো বাগেরহাটে রিফিল করা যায় না। খুলনা থেকে রিফিল করতে হয়। একবার রিফিল করতে ১৫০ টাকা ব্যয় হয়। রিফিলটা মূল নয়, মূল হচ্ছে সেট তৈরি করা। বর্তমানে আমাদের দুটি সেট রয়েছে। আমাদের যদি আরও কয়েকটি সেট থাকত, তাহলে আরও বেশি মানুষকে সেবা দিতে পারতাম।
জেলার মানুষের জন্য আরও ব্যাপক পরিসরে কাজ করতে চায় সংগঠনটি। তাই সমাজের বিত্তবানদের থেকে সহযোগিতা কামনা করেন সংগঠনের সদস্যরা।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাটের চুলকাঠী এলাকার কয়েক যুবক বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ করছেন। তারা আমার সঙ্গে দেখাও করেছেন। আমি তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি কোনো সহায়তার সুযোগ থাকে, আমরা তাদের সহায়তা করব।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, করোনা মহামারিতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংক যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার। আমি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এর পাশাপাশি এই সংগঠনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।
তানজীম আহমেদ/এনএ