চাঁপাইনবাবগঞ্জে সেড পদ্ধতিতে বারোমাসি টমেটো চাষ

আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম উদ্যোক্তা হিসেবে শেড পদ্ধতিতে বারোমাসি টমেটো চাষে সফলতা পেয়েছেন দেদারুল আলম সেলিম। গাছ থেকে সরাসরি বিষমুক্ত পাকা টমেটো সংগ্রহ, অধিক ফলন, গ্রীষ্মকালেও সমানহারে ফলন ও অধিক লাভজনক হওয়ায় জেলায় প্রথম উদ্যোক্তা হিসেবে সেলিমের শেড পদ্ধতিতে বারোমাসি টমেটো চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

জানা গেছে, ক্ষেত থেকেই কোনো কেমিক্যালছাড়া পাকা টমেটো হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ রাজধানী ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে সেলিমের টমেটো। প্রায় ১০ বছর আগে ঢাকায় এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ৬ কাঠা জমিতে চাষাবাদের মধ্য দিয়ে শুরু করেন তিনি। সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের বড়পুকুরিয়া গ্রামে প্রায় ৬ বিঘা জমিতে বারোমাসি টমেটো চাষে ভাগ্য ঘুরেছে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বেকার হয়ে পড়া তরুণ সেলিমের। বর্তমানে তার টমেটো ক্ষেতেই প্রতিদিন কাজের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে এই এলাকার ২০-২৫ জন নারী-পুরুষের।

জেলায় প্রথম শেড পদ্ধতিতে বারোমাসি টমেটো চাষি দিদারুল আলম সেলিম বলেন, বর্তমানে বারি-৪, মিন্টু ও মিন্টু সুপার—এই ৩ হাইব্রিড জাতের টমেটো করছেন তিনি। মাত্র ৮ মাসে প্রত্যেক বিঘায় ১ লাখ টাকা খরচ করে সমান পরিমাণ টাকা লাভ হয়। সেলিমকে দেখে এই এলাকার অনেকেই এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান তিনি। সেড পদ্ধতিতে বারোমাসি টমেটো চাষের বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে সেলিম আরও বলেন, গাছ ও ফল কোনোটাই পানিতে পচে নষ্ট হয় না। এমনকি সার, পানি দেয়াসহ সকল পরিচর্যা করাও খুবই সুবিধাজনক। চারিদিকে জাল দিয়ে ঘেরা থাকে, তাই পাখিতেও ফলন নষ্ট করতে পারে না।

প্রতিদিন খেত থেকে বিষমুক্ত পাকা টমেটো তোলা হয়

উদ্যোক্তা দিদারুল আলম সেলিম বলেন, এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষের আগে নিজেই শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি। কিন্তু এখন আমার ক্ষেতেই প্রতিদিন ২০-২৫ জন শ্রমিক কাজ করে। টমেটো চাষে সফল হয়ে আরও জমি ইজারা নিয়ে লাউ, করলা, মরিচ, শসা চাষাবাদ শুরু করেছি। হঠাৎ কোনো পোকার আক্রমণ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে কাজ করায় কখনও লোকসানের মুখে পড়তে হয়নি।

সেড পদ্ধতিতে বারোমাসি টমেটো ক্ষেতের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী শ্রমিক কমলা রানী বলেন, এই উদ্যোগের কারণে অনেক নারী-পুরুষের কাজ করার সুযোগ হয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও এখানে সমানতালে কাজ করেন।

আরেক শ্রমিক সেমাজুল ইসলাম বলেন, কেমিক্যালছাড়াই সরাসরি গাছ থেকে পাকা টমেটো উৎপাদন হওয়ায় বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই পাকা টমেটো উঠানো হয় এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা জমি থেকেই কিনে নিয়ে যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম সেড পদ্ধতিতে বারোমাসি টমেটো চাষের উদ্যোক্তা দেদারুল ইসলাম সেলিমের ক্ষেতের পাশের কৃষক রাকিব আলী বলেন, সেলিমের এই সফলতা দেখে অনেকেই এই চাষাবাদে আগ্রহী। কয়েকজন এটি শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারে নি। তাই সরকারের এমন নতুন উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন।

কথা হয় সেলিমের টমেটোর একজন নিয়মিত ক্রেতা হাসান আলী ডলারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্ষেত থেকে কয়েকদিন টমেটো কিনে নিয়ে গেছি। জমি থেকে বিষমুক্ত পাকা টমেটো নিয়ে যাওয়ায় বাড়ির লোকজনের কাছেও এটির চাহিদা অনেক বেড়েছে।

এলাকার একজন শিক্ষক বলেন, সরকার এমন উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে প্রণোদনা ও বিভিন্ন সহায়তা করলে আরও বেশি উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে এবং অনেক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের প্রশিক্ষণ অফিসার ড. বিমল কুমার প্রামানিক বলেন, অন্য সাধারণ পদ্ধতির চাইতে সেড পদ্ধতিতে বারোমাসি টমেটো চাষে অনেক সুবিধা ও লাভজনক। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে এমন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হয়। এমনকি উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কর্মকর্তারা কাজ করছেন। সরকার এমন উদ্যোক্তাদের আদর্শ চাষি হিসেবে মূল্যায়ন করে তাদের বিভিন্ন সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখ্য, জেলায় চলতি বছর ১৭৭৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা বেড়ে চাষাবাদ হয়েছে ২ হাজার হেক্টর জমিতে। এছাড়াও প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫ দশমিক ৬২ টন টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এমএসআর