চুয়াডাঙ্গায় সদর হাসপাতালের টয়লেটের দরজা নেই
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের টয়লেটের দরজা ভাঙা
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের টয়লেটের ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন হাসপাতালের রোগী ও রোগীর স্বজনেরা। এদিকে বেড়েছে মশার উপদ্রবও। এতে রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে দুর্গন্ধময় এ পরিবেশ চলে আসছে। এমনকি টয়লেটের দরজাও ভাঙা।
এতে যেমন একদিকে রোগীদের সুস্থ হতে সময় লাগছে বেশি, অন্যদিকে রোগী দেখতে আসা স্বজনরা এই গন্ধময় পরিস্থিতিতে অসুস্থতার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। একই সঙ্গে হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রোগী ও স্বজনেরা।
বিজ্ঞাপন
পেটে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার বেডটি টয়লেটের পাশে হওয়ায় দুর্গন্ধের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর তিনি নাক চেপে ধরে রাখেন। কর্তৃপক্ষের এসব বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত বলে জানান তিনি
আকিমুল ইসলাম, ভর্তি রোগী
সরেজমিনে হাসপাতালে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ কিছুটা পরিচ্ছন্ন থাকলেও সব ওয়ার্ডের প্রবেশমুখেই রয়েছে দুর্গন্ধময় পরিবেশ। প্রবেশমুখগুলোয় রয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এ থেকে আসা দুর্গন্ধে টিকে থাকা দায়। এ ছাড়া হাসপাতালের জেনারেটর রুমের সামনে, লাশঘরের পাশে ও মর্গের সামনে ময়লা-আবর্জনা ভর্তি। সদর হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের টয়লেট অপরিচ্ছন্ন। প্রায় টয়লেটের দরজা অর্ধেক আছে তো অর্ধেক নেই। আবার কোনোটির দরজাও নেই। ভেতরেও নেই কোনো ধরনের উপকরণ।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘদিন ধরে এসব আবর্জনা পরিষ্কার না হওয়ায় হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। আবার এসব আবর্জনায় বৃষ্টির পানি জমে মশার জন্ম ও উপদ্রব বাড়ছে। এ কারণে ওয়ার্ডের রোগী ও স্বজনরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রায় সময় রোগীর স্বজনদের হাসপাতালের ভেতরে নাকে কাপড় দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অনেকেই। রোগী ও তাদের স্বজনরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো ফল পাননি।
হাসপাতালে মেডিসিন (পুরুষ) ওয়ার্ডে ভর্তি নুরুল ইসলাম বলেন, দুই দিন ধরে ভর্তি আছি। হাসপাতালের টয়লেটসহ জানালার গ্রিল অপরিষ্কার। প্রচণ্ড দুর্গন্ধময় পরিবেশ। এমনকি টয়লেটের দরজা ভাঙা ও ময়লায় ভর্তি। এতে মশার উপদ্রবও প্রচুর।
মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি নাসরিন খাতুন বলেন, নোংরা টয়লেটের দুর্গন্ধের কারণে যেতে হয় নাক চেপে। টয়লেটের সবখানে উপচে পড়ে মলমূত্র। রোগীদের তো দূরে থাক, সুস্থ লোকও এসব টয়লেটে গেলে অসুস্থ হয়ে যাবে।
আমাদের পর্যালোচনা অনুযায়ী দিন-রাত মিলিয়ে একজন রোগীর সঙ্গে দেখা করতে অন্তত সাত-আটজন হাসপাতালে আসেন। এতে টয়লেটগুলোয় অনেক বেশি চাপ পড়ে। তাই ময়লা-আবর্জনা থাকে। জনবল কম থাকায় আমাদের পরিছন্নতাকর্মীরা সব সময় থাকতে পারে না। তবে সব সময়ই চেষ্টা করছে সেবা প্রদান করার। এ ছাড়া হাসপাতালের টয়লেটের দরজার ও বিভিন্ন সরঞ্জামের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগকে জানিয়েছি
সিভিল সার্জন, চুয়াডাঙ্গা
পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের ভর্তি রোগী আকিমুল ইসলাম জানান, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার বেডটি টয়লেটের পাশে হওয়ায় দুর্গন্ধের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর তিনি নাক চেপে ধরে রাখেন। কর্তৃপক্ষের এসব বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত বলে জানান তিনি।
মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন জনি মিয়া জানান, কয়েক দিন আগে আমার বড় ভাই কিডনিজনিত সমস্যার কারণে ভর্তি হয়েছেন। দুই দিন ধরে হসপাতালে আছি। ওয়ার্ডের ভেতরটা তেমন পরিষ্কার না। টয়লেট থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এ অবস্থায় আমরা সুস্থ মানুষরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছি।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সাজিদ হাসান ঢাকাপোস্টকে বলেন, আমরা সব সময়ই পরিষ্কার-পরিছন্নতা অভিযান চালাচ্ছি। টয়লেটের দরজার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন এ এস এম মারুফ হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকাপোস্টকে বলেন, হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের সচেতন হতে হবে। অতিরিক্ত রোগী ও দর্শনার্থীকে দায়ী করে তিনি বলেন, আমাদের পর্যালোচনা অনুযায়ী দিন-রাত মিলিয়ে একজন রোগীর সঙ্গে দেখা করতে অন্তত সাত-আটজন হাসপাতালে আসেন। এতে টয়লেটগুলোয় অনেক বেশি চাপ পড়ে। তাই ময়লা-আবর্জনা থাকে। জনবল কম থাকায় আমাদের পরিছন্নতাকর্মীরা সব সময় থাকতে পারে না। তবে সব সময়ই চেষ্টা করছে সেবা প্রদান করার। এ ছাড়া হাসপাতালের টয়লেটের দরজার ও বিভিন্ন সরঞ্জামের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগকে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।