মৌসুম শুরুর আগেই বগুড়ায় আগাম আলু, গত বছরের তুলনায় দামে বড় ধস
মৌসুম শুরু হতে এখনও সময় বাকি থাকলেও বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার মাঠে উঠতে শুরু করেছে স্বল্পমেয়াদি আগাম আলু। তবে আগাম আলুর এই আগমনে কৃষকদের মুখে হাসি নেই। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে, ফলন কিছুটা কমেছে এবং বাজারে আলুর দামে বড় ধস নামায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে মাঠে সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর থেকেই আলু তোলার কাজে ব্যস্ত কৃষকরা। মাঠ থেকে আলু তুলে পরিষ্কার করে বস্তায় ভরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। আবার কেউ মহাস্থান হাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছেন। তবে এই শ্রম ও বিনিয়োগের বিপরীতে প্রত্যাশিত দাম মিলছে না।
বিজ্ঞাপন
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর আগাম আলু প্রতি মণ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে সময় বাজারে নতুন আলুর চাহিদা বেশি থাকার পরেও কৃষকরা তুলনামূলক ভালো দাম পেয়েছিলেন। অন্যদিকে চলতি বছর নতুন আগাম আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়, যা কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা। এই দামে উৎপাদন খরচই উঠছে না বলে দাবি কৃষকদের।
চাষিরা জানান, চলতি মৌসুমে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের মজুরি সবকিছুর দাম বেড়েছে। এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে যেখানে গত বছর তুলনামূলক কম খরচ হয়েছিল, সেখানে এবার খরচ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। অথচ বাজারে দাম কম থাকায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক মো. অহেদুল ইসলাম বলেন, গত বছর আগাম আলুতে ভালো দাম পেয়েছিলাম। এবার সব খরচ বেড়েছে, কিন্তু আলুর দাম একেবারে পড়ে গেছে। এই দামে বিক্রি করলে পরিবার নিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
তবে পাইকারদের ভাষ্য অনুযায়ী, বাজারে এখনও বিপুল পরিমাণ পুরনো আলু মজুত থাকায় নতুন আলুর প্রতি আগ্রহ কম। গাবতলীর পাইকার মো. আলেক মিয়া বলেন, গত বছরের আলু সারা বছর কম দামে বিক্রি হয়েছে এবং অনেক পুরোনো আলু এখনও বাজারে আছে। তাই নতুন আলুর দাম চাপের মধ্যে আছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে প্রায় ১৭ টন ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তবে বাজারে পুরনো আলুর সরবরাহ বেশি থাকায় নতুন আগাম আলুর দাম তুলনামূলক কম।
সামনে যদি সরকারি পর্যায়ে আলু রপ্তানির উদ্যোগ দ্রুত নেওয়া হয় এবং বাজারে পুরনো আলুর চাপ কমে, তাহলে নতুন আলুর দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে কৃষকরা কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বলেন, গত বছর আলুর দাম সারা বছর কম থাকায় চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয়েছিল। এ বছর ৫৫ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, যেখানে গত বছর চাষ হয়েছিল ৬০ হাজার ৪৩৫ হেক্টর।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের আলু চাষ কমিয়ে সরিষা বা অন্যান্য লাভজনক ফসলের দিকে ঝুঁকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে অনেক কৃষক সেইভাবে মানিয়ে নিতে পারেননি।
এদিকে ন্যায্য দামের অপেক্ষায় কৃষক বর্ধিত উৎপাদন খরচ, কম দাম ও অনিশ্চিত বাজার পরিস্থিতিতে বগুড়ার আলুচাষিরা এখন ন্যায্য দামের আশায় দিন গুনছেন। তাদের দাবি, সরকারি বাজার ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ সুবিধা ও রপ্তানি উদ্যোগ জোরদার করা হলে এই সংকট অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
আব্দুল মোমিন/আরকে