বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বগুড়ায়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পৈতৃক ভিটা ও বেগম খালেদা জিয়ার শ্বশুরবাড়ি গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী এলাকায় সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের আবহ বিরাজ করছে।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাবতলী ও আশপাশের এলাকায় শোকাহত মানুষের ঢল নামে। দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই যেন এই খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

তার মৃত্যুর খবর শোনার পরপরই জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। তাদের চোখেমুখে ছিল গভীর শোক ও নিস্তব্ধতা। সকালে দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, বগুড়ার সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার সম্পর্ক ছিল আত্মিক ও রাজনৈতিক দুদিক থেকেই গভীর। কারণ, এই জেলাতেই তার শ্বশুর বাড়ি। বগুড়ায় দলীয় কোনো কর্মসূচিতে এলে তিনি গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের জিয়া বাড়িতে যেতেন এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিতেন।

নশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জোবাইদুর রহমান গামা বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আমরা বগুড়াবাসী সবসময় গর্ববোধ করতাম। বগুড়ায় তার শ্বশুর বাড়ি, এই পরিচয় আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি আলাদা মর্যাদা এনে দিয়েছিল। তার মৃত্যুতে যেন সেই অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।

জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, আজ আমরা গণতন্ত্রের মাকে হারালাম, আমাদের অভিভাবককে হারালাম। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ঐক্যের এক প্রতীককে হারালাম।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত সব কর্মসূচি জেলা বিএনপি পালন করবে। ইতোমধ্যে বগুড়ার বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসায় কোরআন খতম চলছে।

জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজীবন দেশের মানুষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে কাজ করেছেন। তিনি কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেননি। যদি তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করতেন, তাহলে হয়তো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাকে এতো ত্যাগ স্বীকার করতে হতো না। অন্যায়ের সঙ্গে আপোস না করার দৃঢ় অবস্থানের কারণেই তিনি জীবনে চরম মূল্য দিয়েছেন।

তিনি দেশবাসীর কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, আমরা সবাই বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি তিনি যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।

সকাল থেকেই গাবতলীর জিয়া বাড়িতে স্বজন, দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

জিয়া বাড়ির এক স্বজন বলেন, এই বাড়ির সঙ্গে তার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমরা আশা করেছিলাম তিনি সুস্থ হয়ে আবার একদিন এই বাড়ির আঙিনায় ফিরবেন। কিন্তু একটি সংবাদে সেই আশা চিরতরে শেষ হয়ে গেল।

উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়া বগুড়া-৭ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ওই আসনে তার পক্ষে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন।

আব্দুল মোমিন/এএমকে