ক্লান্ত দুই হাতি, নৌযান খরচের টাকা নেই বন বিভাগের!
মিয়ানমার থেকে সাঁতরে নাফ নদী তীরে এসেছে দুটো বুনো হাতি। দীর্ঘ ৭২ ঘণ্টা পরও ভিন্ন ভিন্ন এলাকা ঘুরে কোনোভাবে পাহাড়ে ঢুকতে পারেনি। দীর্ঘ সময় ধরে নোনা পানিতে থাকলে হাতি দুটি অসুস্থ হয়ে মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা। এদিকে হাতি দুটি উদ্ধারে বন বিভাগের নৌযান খরচের টাকা নেই বলে জানা গেছে।
বন বিভাগ ও স্থানীয়রা জানায়, শনিবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় পাঁচ ঘণ্টা পর হাতি দুটিকে উদ্ধার করে বনাঞ্চলে ঢুকিয়ে দেয় আইইউসিএন বাংলাদেশের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা। কিন্তু রোববার (২৭ জুন) দুপুরে আবারো হাতি দুটি টেকনাফের জালিয়াপাড়া পয়েন্ট দিয়ে নাফ নদীতে নেমে পড়ে। সোমবার সকালে হাতি দুটি শাহপরীর দ্বীপ জেটির পশ্চিম দিকের গুলারচরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে আছে।
বিজ্ঞাপন
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, খাদ্যের অভাবে মিয়ানমার থেকে নাফ নদী সাঁতরে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বনাঞ্চলে ঢোকার চেষ্টা করছিল হাতি দুটি। এ সময় স্থানীয় লোকজনের ভিড় দেখে নাফ নদীর তীরে প্যারাবনে ছোটাছুটি শুরু করে।
পরে বন বিভাগের লোকজন দাবি করে, হাতি দুটি বনে ঢুকেছে। কিন্তু পরের দিন দেখা যায়, হাতি দুটি শাহপরীর দ্বীপে চলে এসেছে। সোমবার সকালে ক্লান্ত হয়ে গুলারচরে আটকা পড়েছে তারা।
বিজ্ঞাপন
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ৭২ ঘণ্টা ধরে হাতি দুটিকে দৌড়ের ওপর রাখা হয়েছে। তারা এখন ক্লান্ত হয়ে চরে পড়ে আছে। বিভিন্ন দেশে দেখা যায়, বন্যপ্রাণী উদ্ধারে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের বন বিভাগে মনে হয় সে ব্যবস্থা নেই। যার ফলে হয়তো চরেই কেটে যেতে পারে হাতি দুটির জীবন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, লাঠি দিয়ে হাতি উদ্ধার করতে কি পারবে বন বিভাগ? প্রত্যেকবার অপরিকল্পিত উদ্যোগ হাতিকে ঝুঁকিতে ফেলছে। অনেক সময় দেখা যায়, বেকসিন দিয়ে অচেতন করে উদ্ধার করা হয় হাতিকে। কিন্তু আমাদের বন বিভাগের কর্মকর্তারা নৌযান খরচের টাকার জন্য বিভিন্ন এনজিওতে ধরনা দিচ্ছেন। এসব আসলেই হাস্যকর।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোনা পানিতে দীর্ঘ সময় থাকার পাশাপাশি দৌড়ে ক্লান্ত হচ্ছে হাতি। যেকোনো মুহূর্তে স্বাস্থ্যগতভাবে দুর্বল হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে হাতি দুটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইইউসিএন বাংলাদেশের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের এক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু হাতি দুটিকে তাড়া করে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। প্রথম ২৪ ঘণ্টা বন বিভাগকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা যখন এল তখন উল্টো আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তাদের কাছে নৌযানের ভাড়া চাচ্ছে বন বিভাগ।
নৌযানের ব্যবস্থা করতে না পারার কথা শিকার করে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, টেকনাফ সীমান্তের নাফ নদীর প্যারাবনে দুটি মা হাতি এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছিল। আমাদের রেন্সপস টিম ও সিপিপি সদস্যরা কাজ করছে। বন্যপ্রাণীকে গুলি করা সম্ভব নয়।
ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে অচেতন করে উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা আছে কি না এমন প্রশ্নে আশিক আহমেদ বলেন, সেই ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা আমাদের নেই। প্রকৃতপক্ষে একটি নৌযানের ব্যবস্থা করার ক্ষমতাও আমাদের নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে জড়ো হওয়া মানুষ সরিয়ে নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বন বিভাগ তাদের কৌশল ব্যবহার করে নিয়ে যাবে। তাদের সক্ষমতা নেই এ ধরনের কোনো কিছু আমাদের জানানো হয়নি।
এসপি