একটা সময় বিশাল আকৃতির হলদু গাছের সমাহার ছিল দেশে। সোনালু শাল গাছের সহযোগী হিসেবে এক সময় সারাদেশে ছড়িয়ে ছিল। বিপন্নের তালিকায় থাকা হলদু ও সোনালু গাছ রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি।

একটা সময় বাংলাদেশের প্রকৃতিতে হাজারো নাম জানা, না জানা গাছে পরিপূর্ণ ছিল। কালের বিবর্তণে এখন অনেক গাছ বিপন্ন-বিলুপ্তের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এর ফলে প্রকৃতি প্রতিনিয়তই হারিয়েছে তার স্বকীয়তা। 

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রকৃতি থেকে বিপন্ন হয়ে পড়া গাছ নিয়ে একটি বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া বিপন্ন-বিলুপ্তের তালিকায় থাকা গাছগুলোকে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনতে পার্কের বর্ধিতাংশে লাগানো হয়েছে ২০ হাজার গাছ। প্রকৃতি রক্ষার পাশাপাশি প্রাণীকূলের খাবারের চাহিদা পূরণ করবে এ গাছগুলো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে, দেশের সর্ববৃহৎ এই সাফারি পার্কে একদিকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রাণীর সমাহার রয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ পাওয়ায় উল্লেখযোগ্যভাবে প্রাণীর প্রজনন হচ্ছে। তবে উল্লেখ করার বিষয় দর্শনার্থীদের বিনোদনের পাশাপাশি পার্কটি আধুনিক বায়োডারভারসিটি হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 

৩ হাজার ৬৯০ একর জমিতে গড়ে উঠা এ সাফারি পার্কের সীমানা প্রাচীরের ভেতরেই প্রায় ৩৪ হেক্টর জমিতে বিলুপ্ত ও বিপন্ন গাছ রোপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে পার্কের বর্ধিতাংশে এসব গাছ রোপন করা হয়।

রোপনকৃত ৬৫ প্রজাতির প্রায় ২০ হাজার গাছের মধ্যে রয়েছে, নাগলিঙ্গম, রক্তন, শিমুল, ছাতয়ান, পিতরাজ, পলাশ, চাপালিশ, ডেউয়া, গর্জন, সিভিট, কদবেল, ঢাকিজাম, দেশি গাব, মহুয়া, ছাল মুগড়া, লোহাকাঠ, জগডুমুর, সাদা পাকুর, কাঠবাদাম, জাম, আমলকি, হরতকি, খৈয়াবাবলা, বহেরাসহ বেশ কিছু গাছ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশাল আয়তনের এ সাফারি পার্কের সীমানা প্রাচীরের ভেতর এখনও অধিকাংশই শাল গজারি গাছ রয়েছে। এ পার্ককে ঘিরে এখন সরকারি ভাবে মাস্টারপ্ল্যানের কাজ চলছে। পার্কের নির্দ্দিষ্ট এলাকায় বিভিন্ন প্রাণী বেস্টনিতে প্রাণী ছাড়াও হাজারো পশু পাখি উন্মুক্ত অবস্থায় বিচরণরত রয়েছে। সেইসব প্রাণীর খাবার যোগানের উপযোগী বিলুপ্ত গাছ রোপন করা হয়েছে। প্রায় বেশ কিছুদিন পূর্বে এসব গাছ রোপন করা হলেও এখন বেশ পরিপূর্ণ। আমাদের আশা এ গাছগুলো বড় হয়ে উঠলে দেশি-বিদেশি প্রাণীর অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে পার্কটি। সঙ্গে দর্শনার্থীরাও দেশীয় বিলুপ্ত ও বিপন্ন হওয়া গাছ সম্পর্কে একটা ধারণা পাবে।

তিনি আরও জানান, এ উদ্যোগের ফলে একদিকে এসব গাছ আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে টিকে থাকবে, সঙ্গে পাখি ও পশুদের খাবারের জোগান দেবে। বেশ কিছুদিন পূর্বে এসব গাছ রোপন করা হলেও পার্ক কর্তৃপক্ষের নজরের মধ্যেই বেশ দ্রুতই বড় হচ্ছে গাছগুলো। চলতি বর্ষায় আপন মহিমায় সেজেছে বিপন্ন গাছের এ বাগান।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ন-সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা মানুষরাই নানাভাবে প্রকৃতির ওপর অত্যাচারে লিপ্ত হয়েছি। এ কারণেই প্রকৃতি থেকে অনেক গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারিভাবে এমন উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। এমন উদ্যোগের ফলে হারানো অনেক গাছই প্রকৃতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এর ফলে জীববৈচিত্রেও ভিন্নতা আসবে।

শিহাব খান/এমএএস