ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল

রংপুরে ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে রোগী ভর্তির সুযোগ ফুরিয়ে আসছে। গড়ে প্রতিদিন ১২ জনের বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালটিতে শয্যা (বেড) সংকট দেখা দিয়েছে। ফাঁকা নেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা।

দশটি আইসিইউ বেড নিয়ে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটি যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে মাত্র ৮টিতে ভেন্টিলেটর সুবিধা রয়েছে। বর্তমানে সেখানে আইসিইউ বেড খালি নেই উল্লেখ করে বাইরে নোটিশও সাঁটিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার (২ জুলাই) বিকেলে রংপুর সদর হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালের প্রবেশপথে সাঁটানো একটি নোটিশে আইসিইউ বেড না থাকায় বিষয়টি জানানো হয়। এ নোটিশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এসএম নুরুন নবী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভেন্টিলেটর সুবিধাসম্বলিত আটটি আইসিইউ বেডের একটিও ফাঁকা নেই। বরং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮৫ রোগীর মধ্যে আরও ১৫-২০ জনকে আইসিইউ নেওয়া প্রয়োজন।

কিন্তু বেড ফাঁকা না থাকায় সংকটাপন্নদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে শঙ্কিত রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকেরা। ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালের আটটি আইসিইউ বেড ছাড়াও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও ২০টি আইসিইউ বেড রয়েছে।

প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আইসিইউ বেড পেতে রোগীর স্বজনদের ছোটাছুটি বাড়ছে। রংপুর জেলায় মাত্র ২৮টি আইসিইউ বেড দিয়ে বিভাগের আট জেলার মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত বছরের ১৯ এপ্রিল থেকে তিন তলাবিশিষ্ট ১০০ শয্যার নবনির্মিত রংপুর শিশু হাসপাতালটিকে দুর্যোগময় এ সময়ে ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রংপুর শিশু হাসপাতালটি নির্মাণের পর দীর্ঘদিন ধরে উদ্বোধনের অপেক্ষায় ছিল।

মহামারি করোনাক্রান্তিতে এখন এটি ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল। প্রথম ধাপে এই হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড ও ১০টি ভেন্টিলেটর দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধনকালে বলা হয়েছিল, পর্যায়ক্রমে তা ৫০ এ উন্নীত করা হবে। 

কিন্ত গেল এক বছরে হাসপাতালটিতে আর আইসিইউ বেড বাড়ানো হয়নি। বরং দুটি ভেন্টিলেটর অচল হয়ে পড়ে আছে। সব ধরনের সুযোগসুবিধা সম্বলিত এ আইসোলেশন হাসপাতালে চিকিৎসকদের জন্য দুটি ও নার্সদের জন্য একটি আবাসিক কোয়ার্টার রয়েছে।

চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনে থাকা সকলে আন্তরিক হলেও দুর্ভোগ বেড়েছে রোগী ভর্তির চাপ বাড়াতে। হাসপাতালটি রোগীদের গ্রিন জোন, রেড জোনসহ পৃথক পৃথক জোন রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

চিকিৎসক নুর-ই সাবা আশা জানান, করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলে সেখানে অক্সিজেন পোর্ট একশ শয্যার নয়। আরও আইসিইউ বেড বাড়ানো প্রয়োজন। হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স এবং ডেডিকেটেড ওয়ার্ডবয়, ক্লিনারের অপ্রতুলতা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের আওতায় এখন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের টেলিমেডিসেনে বাসায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অথচ আগে আমরা তাদের হাসপাতালেই ভর্তি করাতাম। বর্তমানে আমার মতো ৩৫-৪০ জন চিকিৎসক টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছেন।  

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এসএম নুরুন নবী তার নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘১০০ শয্যাবিশিষ্ট (৮টি আইসিইউ) রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে আজ ৮৫ জন রোগী ভর্তি আছেন। দৈনিক গড়ে ১২ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘ভর্তির প্রবাহ না কমলে আগামী দু-একদিনের মধ্যে রোগী ভর্তি করোনার মতো কোনো শয্যা খালি থাকবেনা।’ এই সংকট সমাধানে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে দ্রুত রোগী ভর্তির বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানান।

জানা গেছে, বিভাগের ৮ জেলায় দেড় কোটির বেশি মানুষের জন্য আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ৪৬টি। এর মধ্যে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে ১০টি (সচল ৮টি), রমেক হাসপাতালে ২০টি, দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে ১৬টি বেড।

এসব হাসপাতালে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকেই শয্যা বৃদ্ধির কথা থাকলেও তা আর হয়নি। বর্তমানে রংপুর ও দিনাজপুর ছাড়া বিভাগে বাকি ছয় জেলা কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার কোনো হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা নেই।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বহুবার আশ্বাস দেওয়া হলে আইসিইউ বেড স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় দফায় দেশে করোনার বিস্তার অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলে নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু সংকট সমাধানে কোনো কার্যক্রম না করার আগেই করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে বেশামাল হয়ে উঠেছে পুরো রংপুর বিভাগ।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবু মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলাম, বিভাগে সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশের ওপরে। করোনা শনাক্তের শুরু থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বিভাগে ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ২৭ হাজার ১৬০ জন শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৫৩৭ জন।

এমএসআর