খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসে জেলার ৯ উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলার ২ উপজেলার মানুষজন। করোনাকালের শুরু থেকেই পাহাড়ের দুর্গম এলাকা থেকে উপসর্গ নিয়ে রোগীরা এখান থেকে সেবা নিয়েছেন। দেশের অন্যান্য জেলায় করোনার প্রভাব বিস্তার করলেও পার্বত্য এ জেলায় অনেকটা নিয়ন্ত্রিত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।    

তবে সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে করোনার প্রভাব আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু করোনা রোগীদের সেবা নিশ্চিতে জরুরি অক্সিজেন সেবাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

সোমবার (০৫ জুলাই) সকাল থেকে ঘণ্টাব্যাপী হাসপাতালটিতে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অক্সিজেন। রোগীর চাহিদা অনুযায়ী এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রোগীদের নিয়মমতো দেখাশোনা করছে ডাক্তার এবং নার্সরা। অন্য রোগীর চেয়ে বেশি সেবা দেওয়া হচ্ছে করোনা রোগীদের।

প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। সোমবারও সকাল থেকে ১০টা পর্যন্ত ৩১ জন নমুনা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন জমা দিয়েছে।

গত ১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত নমুনা দিয়েছে ৪০৩ জন৷ এরমধ্যে পজিটিভ রোগী ১৪৩ জন। তারমধ্যে হাসপাতালে ৫০ বেডের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ৩০ জন। বাকীরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রতিদিন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে, আবার অনেকে উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে।

করোনা ওয়ার্ডে রাউন্ডে থাকা ডা. মো. আলাউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত গুরুতর কোনো রোগী নেই। যারা আছে তাদের আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমি নিজেই প্রতিদিন রোগীদের দেখাশোনা করছি। এখানে যারা ভর্তি রয়েছে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া যে সব রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে না তাদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, খাগড়াছড়িতে যে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট রয়েছে সেটির মাধ্যমে আমরা সব করোনা রোগীকে অক্সিজেন দিচ্ছি। এতে করে যার যতটুকু প্রয়োজন তা দেওয়া যাচ্ছে। আমাদের ৬ হাজার লিটারের ট্যাংক থেকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে সবাইকে। এখনও পর্যন্ত আমাদের ওই ট্যাংকে ৯০০ লিটার মজুত রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডারে প্রায় ৫০০ লিটার মজুত আছে। ট্যাংক খালি হলে এগুলো দিয়ে ৪/৫ দিন চালানো সম্ভব। আমাদের কোনো রোগীর এখন পর্যন্ত অক্সিজেনের জন্য সমস্যা হয়নি। আশা করছি ভবিষ্যতে সমস্যা হবে না।

মাটিরাঙ্গা ভুইঞা পাড়া থেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর ছেলে জয়নাল আবেদীন বলেন, ২ দিন আগে মাকে এনে ভর্তি করেছি। এখন আগের তুলনায় অনেক সুস্থ আছে। অক্সিজেন চলছে সার্বক্ষণিক। করোনা ওয়ার্ডের সেবা খুবই সন্তোষজনক। যে সেবা আশা করেছি তার চেয়ে অনেক বেশি সেবা পাচ্ছি।

রাঙ্গামাটির মারিস্যা থেকে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে আসা করোনা রোগীর আত্মীয় নিলুপা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার উপসর্গ নিয়ে আজ ৯ দিন হলো ভর্তি করেছি আমার শাশুড়িকে। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। নিয়মিত সেবা দিচ্ছে হাসপাতালের লোকজন। প্রতিদিন প্রয়োজন অনুসারে অক্সিজেন দিচ্ছে। আগের ছেয়ে এখন অনেক সুস্থ। আশাকরি খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাড়ি ফিরতে পারবো।

এদিকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সাধারণ মানুষ রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিতে আসছে হাসপাতালে। এই ভ্যাকসিন ফুস করতে কাজ করছে খাগড়াছড়ি যুব রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।

এসএম