নওগাঁয় করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়েছে। জেলায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ২টি আইসিইউ বেডের সংখ্যা থেকেও চালু না হওয়ায় গুরুতর রোগীরা ছুটছেন বিভাগীয় শহরের বড় হাসপাতালে।

কিন্তু বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোও রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, রোগীর চাপ আরও বেড়ে গেলে চিকিৎসা সেবা বড় সংকটে পড়তে পারে।

সরেজমিনে জানা যায়, নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে হঠাৎ রোগীর চাপ দেখা দিয়েছে। গত চার দিন ধরে হাসপাতালের বেড পাচ্ছেন না রোগীরা। বিশেষ কারণ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না কেউ। অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বেড ছাড়াও ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নওগাঁয় গত একমাস ধরে জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। ঘরে ঘরে জ্বরে ভুগছেন অনেকে। জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শত শত রোগী স্থানীয় ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিলেও হাসপাতালে ভিড়ছেন না। তবে হাসপাতালে রোগী বেশি ভর্তি থাকা নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। 

রোগী বা তাদের স্বজনদের দাবি, কোনোরকম জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে হাসপাতালে গেলে জোর করে করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। আর হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালে ১৭ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন।

অনেক রোগীরা হাসপাতালে থাকতে চাচ্ছেন না। বুবলী সাহা নামে এক নারী জ্বরে ভুগছেন ২ দিন ধরে। তিনি হাসপাতালে রোববার (৪ জুলাই) ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বুবলী সাহার স্বামী শুভ সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে এসে দেখি করোনা সন্দেহে জোর করে টেস্ট করানো হচ্ছে। হাসপাতালের পরিবেশ ভালো লাগছে না। এই জন্য বাড়ি চলে যেতে চাচ্ছি। শহরের আব্দুল হাকিম বলেন, পাঁচদিন জ্বরে ভুগছি। হাসপাতালে ভর্তি আছি। এখনও কোনো বেড পাইনি।

বদলগাছী উপজেলা থেকে জ্বরের চিকিৎসা নিতে আসা তৈমুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা রোগীর চিকিৎসা বিশেষ ধরনের হওয়ার কারণে কখনও কখনও তাদের হাইফ্লো অক্সিজেন বা ভেন্টিলেটর দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সে কারণে এ ধরনের রোগীদের ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া মোটেই সম্ভব নয়।

নওগাঁর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও বগুড়ার টিএমএসএস হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ১৮৯ নমুনা পরীক্ষা করে ৩১ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে।

নওগাঁয় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ২৩ এপ্রিল। এ পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৩৬। জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৯ জন। মৃত্যুর হার ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
 
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পারসন ও সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, হাসপাতালে কোনো কিছুরই সংকট নেই। আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। এরপর আমরা হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যবহার করছি। এখন ম্যানিফোল্ড পদ্ধতিতে অক্সিজেন সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, যাদের অক্সিজেন বেশি দরকার হচ্ছে, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি। লকডাউন ও বিধিনিষেধের মধ্যেই জেলায় করোনার সংক্রমণ গত দুই দিন থেকে কমেছে। এখন একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। গ্রামের লোকজন স্বাস্থ্যবিধি না মানায় লকডাউন ও বিধিনিষেধ খুব একটা কাজে আসছে না।

এমএসআর