কাটাখালী যুদ্ধ দিবস আজ
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঐতিহাসিক কাটাখালি যুদ্ধ দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এইদিনে পাক হানাদারবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে একই পরিবারের ৩ মুক্তিযোদ্ধাসহ ১২ জন শহীদ হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন কমান্ডার নাজমুল আহসান, মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেন।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কোম্পানি কমান্ডার নাজমুলের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শক্তিশালী ডিনামাইট ফিট করে ঝিনাইগাতী-শেরপুর সড়কের কাটাখালি ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর সফল অপারেশন শেষ করতে ৬ জুলাই ভোর হয়ে যাওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা পার্শ্ববর্তী রাঙ্গামাটি গ্রামে আশ্রয় নেন।
বিজ্ঞাপন
ওই দিন গ্রামের স্থানীয়রা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে। সূর্য ওঠার পর দিনের আলো ফুটে ওঠায় মুক্তিযোদ্ধারা বের হওয়াটা নিরাপদ মনে না করে সেখানেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। একই গ্রামের পাক দালাল জালাল মিস্ত্রী পাকবাহিনীর স্থানীয় হেড কোয়ার্টার আহাম্মদনগর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবরটি পৌঁছে দেয়।
খবর পেয়ে পাক হানাদারবাহিনী দ্রুত ৬ জুলাই সকালে ওই গ্রামটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ ঘটনায় কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি ছুড়ে। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। পাকবাহিনী অবিরাম গুলি বর্ষণ শুরু করে।
বিজ্ঞাপন
ওই গ্রামের তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাওয়ার একমাত্র পথ খোলা ছিল রাঙ্গামাটি বিলের দিকে। বিলটিও পানিতে তখন কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। এমন অবস্থায় ওই বিলের পানিতে নেমে একাই কভারিং ফায়ার শুরু করে সাহসী কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল আহসান। যেন অন্য মুক্তিযোদ্ধারা বিলের পানি সাঁতরে পার হতে পারে।
এমন সময় হঠাৎ পাকিস্তানিদের এলোপাতাড়ি ফায়ারে কমান্ডার নাজমুলের বুক ঝাঁঝড়া হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।কমান্ডার নাজমুলের লাশ আনতে গিয়ে তার চাচাতো ভাই মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেনও শহীদ হন পাকবাহিনীদের গুলিতে।
উল্লেখ্যে, মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের পর শহীদ নাজমুলের নামে ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ে হল, নালিতাবাড়ীতে কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে শহীদ নাজমুলকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়।
এছাড়াও শেরপুর জেলার বিভিন্ন সংগঠনের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেই সেতুটি সংরক্ষণে ইতোমধ্যে সংস্কারসহ একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
জাহিদুল খান সৌরভ/এমএসআর