করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গাছতলায় রিনা খাতুন

উপসর্গ নিয়ে সোমবার (৫ জুলাই) রাতে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন রিনা খাতুন (৫৫)। তাকে পাঠানো হয় করোনা ওয়ার্ডের ইয়োলো জোনে। কিন্তু সেখানে শয্যা খালি নেই। বারান্দাও জায়গা ফাঁকা নেই।

বাধ্য হয়ে স্বজনরা তাকে করোনা ওয়ার্ডের বাইরে নমুনা সংগ্রহের জন্য রাখা টেবিলের ওপর রাখেন। মঙ্গলবার সকালে নমুনা সংগ্রহ শুরু হওয়ায় টেবিলের ওপর থেকে নামিয়ে গাছতলায় রাখা হয়।

এভাবেই চরম অসহায়ত্বের কথা জানালেন রিনা খাতুনের স্বামী আবদুল আজিজ। তাদের বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বারবাগ গ্রামে।

রিনা বেগমের স্বামী মুদিদোকানি আবদুল আজিজ বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে রোগী নিয়ে ওয়ার্ডের বাইরে বসে আছি। নার্সদের সঙ্গে কথাই বলা যাচ্ছে না। শুধু অক্সিজেন দিয়েই তারা দায়িত্ব শেষ করেছেন। কোনো চিকিৎসা-ওষুধপত্র নেই।

তিনি আরও বলেন, ওয়ার্ড বয়রা আমাদের বলছে, ‘আপনাদের রোগীর করোনা পজিটিভ হয়েছে। তাকে রেড জোনে নিয়ে যাব, অপেক্ষা করেন।’ যশোর জেনারেল হাসপাতালে এমনিতেই কোনো চিকিৎসা নেই। আমরা রোগীকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাব বলে ভাবছি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৭৮২ নমুনা পরীক্ষায় ২৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।নতুন করে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ছয় জন করোনা রোগী ছিলেন। বাকি ছয়জনের উপসর্গ ছিল। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ২৩৫ জন।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ আহমেদ বলেন, করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগী বাড়ছেই। শয্যা বাড়িয়েও জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। ফলে জায়গা না পেয়ে বারান্দা কিংবা গাছতলায় থাকার মতো ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, তবে আমরা ইয়োলো জোনের শয্যা ও জায়গা বৃদ্ধি করছি। আরও বাড়ানো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। করোনা ওয়ার্ডের রেড জোনে ১৪৬ শয্যার বিপরীতে ১৩৬ জন ও ইয়োলো জোনের ২২ শয্যার বিপরীতে ৯৯ জন রোগী ভর্তি আছেন।

ইয়েলো জোনের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, রেড জোনে জায়গা বাড়ানোর দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইয়েলো জোনে নতুন ওয়ার্ড সংযুক্ত করার মতো জায়গা হাসপাতালে ছিল না।

তিনি আরও বলেন, রোগীর চাপ সামাল দেওয়ার জন্য হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্র ইয়েলো জোনে সংযুক্ত করে নতুন ২৪টি শয্যা বসানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৬০ রোগীকে এই ওয়ার্ডে রাখা যাবে। তখন ইয়েলো জোনের পরিবেশ অনেক ভালো হয়ে যাবে।

জাহিদ হাসান/এমএসআর