শান্তা মনির মা সিমু আক্তার

‘আমার শান্তা মনি এই ধোঁয়ার লগে উইড়া গেছে রে...।’ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে (সেজান জুসের কারখানা) অগ্নিকাণ্ডের পর একমাত্র কন্যা শিশুকে হারিয়ে শুক্রবার (০৯ জুলাই) দুপুরে এভাবেই বিলাপ করছিলেন শান্তা মনির মা সিমু আক্তার। 

আট বছর আগে স্বামী জাকির হোসেন মারা যাওয়ার পর থেকে সিমু আক্তার থাকেন কর্ণগোপ নতুন বাজার এলাকায়। এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সংসার তার। সিমু আক্তার নিজেও রূপগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। লকডাউনে মাদরাসা বন্ধ থাকায় মাত্র তিনদিন আগে সেজান জুস কারখানায় শান্তা মনিকে (১৩) কাজে দিয়েছিলেন সিমু আক্তার। কিন্তু সেই কাজে দেওয়াটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জীবনে। 

কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে মেয়ের খোজঁ পাচ্ছেন না সিমু আক্তার। যে ৪র্থ তলার ফ্লোর থেকে ৪৯টি মরদেহ বের করা হয়েছে সেই ফ্লোরের ঠিক নিচেই কাজ করতো শান্তা মনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওই কারখানার ছয়তলা ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে ভবনটি থেকে লাফিয়ে পড়েন শ্রমিক স্বপ্না রানী (৪৫) ও মিনা আক্তার (৩৩)। ঘটনাস্থলেই তারা দুজন মারা যান। এরপর মোরসালিন (২৮) নামের একজন শ্রমিক প্রাণ বাঁচাতে ওই ভবনের তৃতীয় তলা থেকে লাফ দেন। মোরসালিনকে রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কারখানা থেকে শুক্রবার (০৯ জুলাই)  দুপুরে আরও ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। 

এদিকে এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসন থেকে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। এই তদন্ত কমিটি আগুন লাগার কারণ উদঘাটনের পাশাপাশি দোষীদের শনাক্ত করবে।   

তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ নুসরাত জাহান, জেলার ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন, জেলা পুলিশের একজন প্রতিনিধি এবং কলকারখানা অধিদফতরের জেলার একজন কর্মকর্তা। 

আরএআর