পঞ্চানন্দ সাহা, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার রান্ধুনীবাড়ি জনতা ব্যাংক শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। প্রায় তিন মাস আগে কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) এর টিকার দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করেছেন। অথচ অনলাইনে সনদ তুলতে গিয়ে দেখলেন দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছেন তিনি।

শুক্রবার (৯ জুলাই) সকালে ঢাকা পোস্টকে এ বিড়ম্বনার কথা নিজেই জানান সিরাজগঞ্জ সদরের বাসিন্দা পঞ্চানন্দ সাহা। অনেকটা অভিমান নিয়েই বলেন, টিকাদান কর্মসূচির শুরুর দিকের আবেদনে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ ২৫০শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল থেকে কোভিড-১৯ টিকার প্রথম ডোজ নিই। যা আমার টিকার কার্ডে উল্লেখ রয়েছে। 

তিনি বলেন, গত ১৫ এপ্রিল আমি দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করি। এটিও কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরসহ আমার টিকা কার্ডে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু অনলাইনে টিকার সনদ তুলতে গিয়ে দেখি আমার দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করা হয়নি। সনদ পেতে দ্বিতীয় ডোজ শেষ করে পুনরায় চেষ্টা করতে বলা হচ্ছে। অথচ প্রায় তিন মাস আগে আমি টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছি। 

এই ব্যাংক কর্মকর্তা আরও বলেন, আমার স্ত্রী পেশায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমি যখন তার টিকা নেওয়ার আবেদন সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি তখন একটি ওটিপি আসার কথা। কিন্তু নিবন্ধন সম্পন্ন হলেও সেই ওটিপি না এসে মোবাইল নম্বরের স্থলে ত্রুটি দেখায়। মায়ের টিকার আবেদনেও এমনটি দেখায়। এসব বিষয় নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছি। সামনে কোনো হয়রানির শিকার হব কি না, সেটাও ভেবে উঠতে পারছি না। পরিবারের টিকা নেওয়া নিয়েও আমি চিন্তিত।

টিকা কার্ডে দুই ডোজের তথ্য আছে, অথচ সনদ নিতে গেলে বলা হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়নি 

তিনি বলেন, আমরা সবাই দেখছি বর্তমানে করোনার প্রকোপ বেড়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে। সবাইকে টিকা গ্রহণের জন্যও আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু টিকার সনদপত্রে ভুল-বিভ্রান্তি মানুষের টিকা নেওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দিতে পারে। যেহেতু টিকা নেওয়ার প্রমাণপত্র হলো এ সনদ, তাই এর ভুলকে ছোট করে বা অবহেলার সঙ্গে দেখার সুযোগ নেই। এখনই যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারি প্রয়োজন। করোনা বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের আরও তৎপর হওয়া জরুরি। এসব ক্ষেত্রে তাদের বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে জানতে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. রাম পদ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। তবে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. সৌমিত্র বসাক ঢাকা পোস্টকে বলেন, হয়তো সফটওয়্যারের কিংবা তথ্যগত ত্রুটির কারণে এমন হতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম হীরা বলেন, কিছু সমস্যার কারণে প্রথম এক মাস সফটওয়্যারে অনেক ডাটাই এন্ট্রি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে এমনটা হতে পারে। এছাড়াও আরেকটি বড় সমস্যা হলো, অনেকে নির্ধারিত তারিখে বা পরেও টিকার প্রথম ডোজ নেননি।  কিন্তু সফটওয়্যারে উল্লেখ আছে, তারা টিকা নিয়েছেন। 

তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সরাসরি স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। হয়তো একটু সময় লাগবে, তবে এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যারা এমন সমস্যায় পড়েছেন, তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করবেন।   

শুভ কুমার ঘোষ/আরএইচ