দুইজন তরুণ আর কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে একটি গ্রামের লোকজনকে করোনা ভ্যাকসিনের (টিকা) আওতায় নিয়ে এসেছে। করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে না থেকে গ্রামের লোকজনকে করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করে দিচ্ছে। 

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শাহপুর গ্রামের তরুণ ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম রুবেল ও শিক্ষক খালিদ হাসান খোকনের নেতৃত্বে একদল তরুণ মহৎ এ কাজ করে যাচ্ছেন।

করোনার ভ্যাকসিন (টিকা) পাওয়ার উপযোগী গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকার নিবন্ধন করে দিচ্ছে তরুণরা। এছাড়া করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষার জন্য টিকার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষজনকে পরামর্শ দিচ্ছে তারা। ইতোমধ্যে গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহণ শুরু করেছে। 

এরমধ্যে অনেকেই টিকার দুটি ডোজই গ্রহণ করেছে। এর আগে টিকার নিবন্ধন সম্পন্ন করে সেটি প্রিন্ট করে তাদের টিকা কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে তারা।

টিকা গ্রহণকারী অনেকেই জানান, তরুণরা মিলে গ্রামের মানুষজনকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে এসেছে। তারাই রেজিস্ট্রেশন করে আবার টিকা নিবন্ধনের কার্ড প্রিন্ট করে বাড়ি বাড়ি দিয়ে গেছে। পরে সেই কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিয়েছি। গ্রামের প্রত্যেক মানুষ এখন ভ্যাকসিনের আওতায় শুধুমাত্র তরুণদের কল্যাণে।

তরুণদের নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষক খালিদ হাসান খোকন বলেন, মূলত সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই এ কাজটি শুরু করি আমরা গ্রামের শিক্ষার্থীদের নিয়ে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষজন করোনার ভ্যাকসিন সম্পর্কে অনেক উদাসীন এবং তাদের মাঝে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং নিরলস পরিশ্রমে গ্রামের প্রায় পাঁচশ নারী-পুরুষকে করোনা ভ্যাকসিনের (টিকা) নিবন্ধন করে দেওয়া হয়। এছাড়া টিকার কার্ড প্রিন্ট করে সেই কার্ড বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেয় আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীরা।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গ্রামটি অবস্থিত। এতে গ্রামে প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস। এতে স্বেচ্ছাসেবকদের কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করে দেয়া হয়। গ্রুপের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করে টিকা কার্ড প্রিন্ট করে পৌঁছে দিচ্ছে। টিকা নিবন্ধনের এ কাজ শতভাগ শেষ হওয়া না পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হবে। গ্রামের প্রায় ৮০ ভাগ টিকা নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রাপ্যতার ভিত্তিতে গ্রামের শতভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে।

উপজেলার শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম মিয়া বলেন, গ্রামের মানুষের মাঝে করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ নিয়ে ধরনের ভ্রান্ত ধারণা ছিল। সেটি তরুণ শিক্ষার্থীরা গ্রামের প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সেই ভুল ধারণা পাল্টে দিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছে। এটি প্রশংসনীয় কাজ।

উপজেলা সদর ইউনিয়নের শাহপুর ওয়ার্ডের সদস্য দেলোয়ার হোসেন লেবু বলেন, গ্রামের ছেলেরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে শতভাগ করোনা টিকার আওতায় এনেছে। গ্রামটি এখন শতভাগ ভ্যাকসিনের গ্রাম।

অভিজিৎ/এমএএস