লকডাউন উপেক্ষা করে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন শ্রমিকরা

আগামীকাল সোমবার (২৬ জুলাই) থেকে কারখানা খোলার খবরে কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন শ্রমিকরা। রোববার (২৫ জুলাই) দিনভর গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কাজে ফেরা শ্রমিকদের ভিড় দেখা গেছে। 

শ্রমিকরা জানিয়েছেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের মুঠোফোনে কাজে যোগদানের নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে ঝুঁকি ও ভোগান্তি নিয়েই ফিরতে হচ্ছে তাদের।

অন্যান্য দিনের চাইতে রোববার সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শ্রমিকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অটোরিকশা, ভ্যানগাড়ি, সিএনজি ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীরা চলাচল করছেন। ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মহাসড়কের জৈনাবাজার, নয়নপুর, মাওনা চৌরাস্তা, রাজেন্দ্রপুর, গাজীপুর চৌরাস্তা, টঙ্গী ও আবদুল্লাহপুর এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট থাকলেও তা অনেকটা নিষ্ক্রিয়। যাত্রীরা তল্লাশি চৌকি দেখলেই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে পার হয়ে যাচ্ছেন। চৌকির এপার-ওপার রয়েছে গাড়ির স্ট্যান্ড। 

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়মনসিংহের ফুলপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন ডিজি সোয়েটার লিমিটেড কারখানার তিন শ্রমিক মো. মনসুর আহমেদ, মো. তারেক ও রিফাত আহমেদ। মহাসড়কের এমসি বাজার এলাকায় কথা হয় তাদের সঙ্গে। 

তারা জানান, আগামীকাল সোমবার কারখানায় যথারীতি উৎপাদন কাজ চলবে বলে মুঠোফোনে জানিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাই তারা ঝুঁকি ও ভোগান্তি নিয়েই রওনা হয়েছেন। গণপরিবহন না চলায় অটোরিকশা ও সিএনজি যোগে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছেন। চালকরা পুলিশ চেকপোস্ট দেখেই নামিয়ে দিচ্ছেন। 

একইভাবে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে সাভারের নরসিংহপুর এলাকায় হা-মীম গ্রুপের কারখানায় ফিরছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কারখানার ইনচার্জ। তিনি বলেন, কারখানা কবে খোলা তা নির্দিষ্ট করে ঈদের ছুটির সময় বলে দেওয়া হয়নি। সকালে মোবাইল ফোনে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) কারখানা খোলার কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আমার অধীনস্ত সকলকে কারখানায় আসার জন্য বলতে বলা হয়েছে।

এদিকে শ্রীপুর পৌর এলাকার তাকওয়া ফেব্রিক্সের শ্রমিক পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ গফরগাঁও থেকে এসেছেন। তিনি জানান, আগামীকাল কারখানা খোলা হবে বলে তাকে জানানো হয়েছে। তাই তিনি শনিবারই কারখানায় চলে এসেছেন।

২৬ ও ২৭ জুলাই কারখানা খোলার খবরে গতকাল শনিবার থেকেই গাজীপুরসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন শিল্পকারখানায় ফিরতে শুরু করেছেন শ্রমিকরা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে বেশ কয়েকটি পুলিশি চেকপোস্ট থাকলেও নানা কৌশলে আসছেন তারা। 

স্থানীয় নোমান গ্রুপের শ্রমিক মো. হিমেল আহমেদ বলেন, সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও কারখানা বন্ধের সময় ৫ দিনের ছুটি দিয়ে রোববার খোলার তারিখ বলে দেওয়া হয়। এজন্য শুক্রবারও শ্রমিকদের বার্তা দেওয়া হয়। বরিশাল থেকে অনেক ঝুঁকি নিয়ে আড়াই হাজার টাকা খরচ করে তিনি এসে দেখেন কারখানা বন্ধ। তার মতো কয়েকশ শ্রমিক এমন ভোগান্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন। এখন যে বাড়ি যাবেন সে ব্যবস্থাও নেই।

এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. আলী আহমদ বলেন,  সব ধরনের যান চলাচল বন্ধের লক্ষ্যে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যারা আইন অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত শিল্পকারখানা খোলার কোনো সুযোগ নেই। শিল্পকারখানার মালিকরা শ্রমিকদের সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ছুটির ঘোষণা না দেওয়া সত্যিই হতাশাজনক। অনেকেই ঈদের পর কারখানা খোলার চেষ্টা করেছিলেন। আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তা বন্ধ করে দিয়েছি।

শিহাব খান/আরএআর