রাত গভীর হলেই বসত মদ ও জুয়ার আসর। বেচা-কেনা হতো হাজার হাজার টাকার অবৈধ বাংলা মদ। নওগাঁ জেলার আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে আসত জুয়াড়ি ও মাদকসেবীরা। রাতভর জুয়া ও মাদক সেবন করে ভোরে চলে যেত তারা। আর এমন অবৈধ কারবার চলত নওগাঁ শহরের খুচরা চাল বাজার সংলগ্ন পৌর মার্কেটের দ্বিতীয় তলার দুটি কক্ষে। কক্ষ দুটি নওগাঁ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কমিশনার শেখ আনোয়ারুল ইসলাম মজনু ও সাবেক কমিশনার নাজমুল হক মন্টুর।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ওই কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ বাংলা মদসহ তিন জনকে আটক করেছে র‌্যাব-৫। তবে সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না অফিস মালিকরা।

সোমবার (২৬ জুলাই) দুপুরে পৌর মার্কেটের দ্বিতীয় তলার ওই কক্ষটিতে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় অফিসের দুটি কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ বাংলা মদসহ তিন জনকে আটক করেছে র‌্যাব। র‌্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের সদস্যরা এ অভিযান পরিচালনা করেন। এতে নেতৃত্ব ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কমান্ডার রুহ - ফি - তাহমিন তৌকির। 

অভিযানে আটকরা হলেন- বনানীপাড়ার আহম্মেদ আলীর ছেলে ফিরোজ হোসেন (২৮), দূর্গাপুরের মৃত শিরিশ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে সুধীর চন্দ্র বিশ্বাস (৩৫) এবং শহরের খাস-নওগাঁ মহল্লার মৃত ওমর আলীর ছেলে জয়নাল হোসেন (৪৫)।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক দোকানি জানান, অফিস কক্ষ দুটি বর্তমান ও সাবেক কমিশনারের মালিকানাধীন। তারা পৌরসভা থেকে লিজ নিয়ে নিজ মালিকানাধীন অফিস চালাতেন সেখানে। দীর্ঘদিন ধরে রাতে সেখানে জুয়ার আসর বসত। সেখানে আশপাশের জেলা থেকে অনেক জুয়াড়ি আসত। মদ-কেনাবেচাও করা হতো। অনেকে জানার পরও ভয়ে মুখ খুলেননি।

তারা জানান, হয়তো সাহস করে কেউ র‌্যাবকে জানিয়েছে। যার কারণে আজ মদ ব্যবসায়ীকে আটকসহ বেচা-কেনার টাকা ও বিপুল পরিমাণ বাংলা মদ উদ্ধার করেছে র‌্যাব। অফিস কক্ষগুলো কমিশনার শেখ আনোয়ারুল ইসলাম মজনু ও সাবেক কমিশনার নাজমুল হক মন্টুর বলেই আমরা জানি।

এ বিষয়ে নওগাঁ পৌরসভা ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ আনোয়ারুল ইসলাম মজনু ফোনে বলেন, অফিসটি আমার ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু ভাইয়ের ছিল। অফিসে বিভিন্ন বিচার ও সালিশ করতাম। ঈদের কয়েকদিন আগে পার-নওগাঁর মহল্লার এক ব্যক্তির কাছে অফিসটি বিক্রি করা হয়েছে। গত এক থেকে দেড় বছর ওই অফিসে আমরা আর যাইনি।

পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু বলেন, ওই অফিসটি আমার ছেলে নাসিউল কবীরের নামে ছিল। ঈদের কিছুদিন আগে অফিসটি বিক্রি করা হয়েছে। অনেকদিন থেকেই সেই অফিসে আমরা যাই না। তবে কার কাছে অফিসটি বিক্রি করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সঠিক উত্তর না দিয়েই কল কেটে দেন। এর পর একাধিকবার তার নাম্বারে ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

র‌্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কমান্ডার রুহ - ফি - তাহমিন তৌকির ঢাকা পোস্টকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজার সংলগ্ন পৌর মার্কেটের দুটি কক্ষে অভিযান চালানো হয়। এ সময় অফিসের কার্টন ভর্তি অবস্থায় ৪৭ লিটার বাংলা মদ উদ্ধার এবং ও ৯ হাজার ৫৬৬ টাকা জব্দ করা হয়। ঘটনার সময় সেখানে অবস্থানরত দুই জন এবং মদ কিনতে আসা একজনসহ তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়।

স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত অফিসের নামে ব্যবহৃত এসব কক্ষে সারারাত জুয়ার আসর বসত। যেখানে নওগাঁ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা থেকে জুয়াড়িরা এসে অংশ নিত। সেই সঙ্গে চলত মদের আসর। তবে অভিযানের সময় ওই অফিস কক্ষের মূল মালিকদের পাওয়া যায়নি। এর সঙ্গে আরও কারা জড়িত সে বিষয়ে র‌্যাবের অধিক তদন্তের পর জানা যাবে। আটকদের বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর মডেল থানায় একটি মামলা করা হবে।

এ বিষয়ে রাত ৯টার দিকে নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, র‌্যাবের অভিযানে মদসহ তিন জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের বিরুদ্ধে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে র‌্যাব। আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকালে আটকদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।

শামীনূর রহমান/এসএসএইচ