রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচার চেষ্টার ঘটনায় আরও দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিবহনের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

গ্রেফতারা হলেন পাবনা জেলা সদরের শ্রীপুর পারচিথুলিয়া গ্রামের শাহিদ মেকারের ছেলে সোহেল ফকির (৪২), একই জেলার ভাউডাঙ্গা গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিন মন্ডলের ছেলে নাছিম হোসেন (২৯)।

মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দুপুরে উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন। গ্রেফতার দুজন দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন পরিবহন চালকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল বলে দাবি পুলিশের।

ওই দুজনকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচার চেষ্টার প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হয়েছে দাবি করে আবু মারুফ হোসেন বলেন, প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে ২৩ জুলাই ফোনে আসামি সোহেল ফকির নিজেকে ডা. রেজাউল করিম দাবি করে দিনাজপুর ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ডভ্যান ও ট্যাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের মনজুরুল আলমকে পরিচয় দেন।

রমেক হাসপাতাল থেকে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য অক্সিজেনের খালি সিলিন্ডার ঢাকায় প্রেরণ ও ঢাকা থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেনভর্তি সিলিন্ডার পরিবহনের কথা বলে ৪০ হাজার টাকা করে তিনটি ট্রাক ভাড়া করেন সোহেল ফকির।

এরপর দিনাজপুর থেকে তিনটি ট্রাক নিয়ে ছয়জন রংপুর মেডিকেল কলেজে পৌঁছানোর পর কথিত ডা. রেজাউল করিমকে ফোন করেন। অপরপ্রান্ত থেকে প্রতারক সোহেল ফকির বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন।

পরে একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল ফ্রি করে দেওয়ার কথা বলে ট্রাকচালকদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখেন সোহল ফকির।

উপকমিশনার আবু মারুফ আরও বলেন, প্রতারক এ চক্রটি সামাজিক যোগােযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ও বিভিন্ন গাড়ির পেছনে থাকা মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ট্রাকভাড়া নেওয়ার কথা বলে এভাবে প্রতারণা করে আসছিল। ২-৩ বছর ধরে একই কায়দায় অসংখ্য প্রতারণা করেছে তারা।

তিনি আরও বলেন, টাকার পরিমাণ কম হওয়ায় অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে এড়িয়ে গেছেন। তবে করোনার ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে মেডিকেল থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিবহনের প্রতারণার ফাঁদ পেতে তাদের রক্ষা হলো না। ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই চক্রটির দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, আরপিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার উজ্জ্বল কুমার, সহকারী পুলিশ কমিশনার ফারুক আহমেদ, আলতাফ হোসেন, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ২৩ জুলাই দুপুরে ঢাকার মহাখালীতে স্বাস্থ্য বিভাগের কেন্দ্রীয় স্টোর রুমে অক্সিজেন সিলিন্ডার নেওয়ার জন্য দিনাজপুর থেকে ৩টি ট্রাক আসে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে। জমা দেওয়া চালানপত্র দেখে সন্দেহ হলে স্টোর ইনচার্জ মেডিকেল প্রশাসনকে বিষয়টি জানান।

মেডিকেল প্রশাসন কেন্দ্রীয় স্টোরে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয় সিলিন্ডার ঢাকায় নেওয়ার কোনো চিঠি বা নির্দেশনা তারা দেননি। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে ট্রাকচালক ও হেলপারদের আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনায় ট্রাক তিনটি জব্দ করে কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয়।

ঘটনার পর দিন মামলা দায়ের হলে ট্রাকচালক জহুরুল ইসলাম (৪৩), মো. হাবিল (২৯) ও মো. সুজন হোসেন (২৯) এবং হেলপার সাঈদ হাসান (২৯), সাইফুল ইসলাম (৩৪) ও আশিক রায় (২৮) আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। তাদের সবার বাড়ি দিনাজপুর জেলায়।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর