দারিদ্র পরিবারের সন্তান আট বছরের শিশু মুন্না (ছদ্মনাম)। দীর্ঘদিন ভালো খাবার জোটেনি। তাই ভালো খাবারের জন্য মায়ের কাছে আবদার করে সে। মা তাকে ৬০ টাকা দেন। সেই টাকা নিয়ে বাজারে মাছ কিনতে যায় মুন্না। পথিমধ্যে মায়ের দেওয়া টাকা হারিয়ে ফেলে মুন্না। এতে সে দিশেহারা হয়ে পড়ে। 

এ সময় রাস্তার পাশেই সারাদিনের অর্জিত টাকা গুনছিলেন এক বৃদ্ধা ভিক্ষুক। মুন্না সেই ভিক্ষুকের টাকা নিয়ে চলে পালিয়ে যায়। ভিক্ষা করে সংগ্রহ করা সব টাকা হারিয়ে কাঁদতে থাকেন অসহায় ভিক্ষুক নিছারন বেগম। 

পুলিশ টানা তিন দিন অভিযানের পর মুন্নাকে শনাক্ত করে থানা হেফাজতে নেয়। পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয় শিশু মুন্না। পরে মুন্নার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হলে মানবিক বিবেচনায় আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে তাকে মায়ের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

এর আগে গত ২৭ জুলাই অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘নিছারনের ভিক্ষার টাকা ছিনিয়ে নিল যুবক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই সূত্র ধরেই চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ অভিযুক্তকে ধরতে মাঠে নামে।

পুলিশ জানায়, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ খানের নেতৃত্বে উপপরিদর্শক হাসানুজ্জামান অভিযুক্তকে ধরতে ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে কোনো সূত্র না পেয়ে আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে শিশুটিকে চিহ্নিত করে পুলিশ। এর আগে শিশুটিকে নিয়ে সরোজগঞ্জ এলাকায় বসবাস করেছিলেন তা মা। সেই সূত্র ধরে শিশুটির আপন চাচা মাছ ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় শুক্রবার (৩০ জুলাই) সকালে ঝিনাইদহ পৌর এলাকা থেকে শিশুটিকে নিয়ে সদর থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ। এরপর সেই ভিক্ষুক নিছারন বেগমকে থানায় নিয়ে আসলে তিনি শিশুটিকে শনাক্ত করেন।

ওসি আবু জিহাদ বলেন, ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদনটি চোখে পড়ার পরই আমি সদর থানার উপপরিদর্শক হাসানুজ্জামানকে অভিযুক্তকে ধরতে নির্দেশ দেই। পুলিশের তিন দিনের প্রচেষ্ঠায় ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়। তবে এমন ঘটনার সাক্ষী এর আগে হইনি।

তিনি বলেন, শিশুটি দীর্ঘদিন মাছসহ ভালো খাবার খাইনি। তাই মায়ের কাছে মাছ খাবে বলে বায়না ধরে। তার মা মাত্র ৬০ টাকা দিয়ে তাকে ঝিনাহদহ থেকে সরোজগঞ্জ বাজারে তার চাচা মাছ ব্যবসায়ীর কাছে পাঠায়। বাজারে যাওয়ার পথে টাকা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে ছেলেটি। সে ওই ভিক্ষুককে টাকা গুনতে দেখে তার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। সব দিক বিবেচনা করে ওই ভিক্ষুকসহ পুলিশ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আপত্তি জানায়। তাদেরকে সদর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে শিশুটিকে মায়ের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, ভিক্ষুক নিছারন বেগম চোখে কম দেখায় প্রথমে অভিযুক্ত ব্যক্তি যুবক বলে জানিয়েছিলেন। এজন্য আমাদেরও তার কাছে পৌঁছাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। 

আফজালুল/আরএআর