মহামারি করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই উৎপাদনমুখী কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে বিপাকে পড়েছেন গ্রামের বাড়িতে থাকা শ্রমিকরা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ, কষ্ট ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে তাদের।

ঈদুল আজহার পর কঠোর বিধিনিষেধে লকডাউনে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন, পোশাক কারখানা সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠান, মার্কেট সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে হঠাৎ করেই আগামীকাল থেকে কারখানা খোলায় এমন বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে কর্মস্থলে ফিরছেন হাজার হাজার শ্রমিক।

কারখানা খোলার খবর সিরাজগঞ্জ থেকে শনিবার ভোরে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন জুয়েল। ৭৭০ টাকা ভাড়ায় সিরাজগঞ্জ থেকে একটি মাইক্রোবাসে গাদাগাদি করে চন্দ্রা পর্যন্ত এসেছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারখানা আগামীকাল থেকে খুলবে। আমরা তো ঈদের ছুটিতে ছিলাম। প্রথম দিন উপস্থিত যদি না হই, তাহলে অ্যাবসেন্ট করে দিতে পারে। অথবা ছাঁটাই হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই ভাড়া বেশি হলেও কষ্ট করেই ফিরলাম।

কারখানা থেকে মেসেজ পেয়ে সোলাইমান দম্পতি রিকশায় রওনা করেছেন কর্মস্থলের উদ্দেশে। টাঙ্গাইল থেকে তিনি রিকশা পরিবর্তন করে করে আশুলিয়ার বাইপাইলে এসে পৌঁছেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৬৫০ টাকা। তিনি বলেন, আমরা দুই জনই মিরপুরে চাকরি করি। কারখানা খুলে দিয়েছে কিন্তু পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়নি। কারখানা থেকে মেসেজ দিয়েছে কারখানায় উপস্থিত থাকতেই হবে। চাকরি বাঁচাতে হবে, তাই ভ্যান নিয়ে রওনা হয়েছি।

বগুড়া থেকে মাইক্রোবাসে করে যাত্রী এনেছেন সাইদুল ইসলাম নামের এক চালক। তিনি বলেন, আমি ভোর ৪টার সময় ৪ জন যাত্রী নিয়ে রওনা করেছি। ভাড়া ঠিক হয়েছিল ১০ হাজার। কিন্তু ঢাকার ভেতরে আজিমপুরে প্রবেশ করতেই চেক পোস্টে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সার্জন দুই হাজার টাকা নিয়েছে। তবে বগুড়া থেকে গাবতলী পর্যন্ত কয়েকটি চেকপোস্ট দেখা গেলেও সেখানে কোনো পুলিশ ছিল না।

রিকশাচালক আতাউর বলেন, আমরা এ কটা দিন রিকশা নিয়ে স্ট্যান্ডে বসে ছিলাম। যাত্রী ছিল না। আজ যাত্রী দিয়ে ভরে গেছে। গ্রামের শ্রমিকরা ফিরতে শুরু করেছে। আজ গাড়ির জমাটা দিতে পারব। ভালো কিছু খাবারও কিনতে পারব। শ্রমিকরা কর্মস্থলে ফিরলে আমাদেরও ইনকাম হয়। তা ছাড়া লকডাউনের জাঁতাকলে আমরা শেষ।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম বলেন, কারখানা খোলার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফিরতে পরিবহনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ছিল। মালিকরাও এটা করতে পারতেন। কিন্তু এটা না করে শ্রমিকদের মেসেজ দিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে বলাটা অমানবিক।

বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাকশিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারখানা খোলার খবরে চাকরির ভয়েই শ্রমিকরা আসতে শুরু করেছেন। তাদের চাকরি হারানোর ভয় আছে। তবে শ্রমিকদের জন্য পরিবহনব্যবস্থা না করে কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত অমানবিক।

তিনি আরও বলেন, আমি চাই শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা হোক। এ ছাড়া কারখানায় পরিবহন সংকটের কারণে কেউ উপস্থিত হতে না পারলে শ্রমিকদের ছুটির টাকা পরিশোধ ও ছাঁটাই না করার আহ্বান জানাই।

এনএ