‘ঠান্ডা কি হামার অভাব মানবে বাহে’
শীতের সকালে বাইসাইকেল চালিয়ে কাজে যাচ্ছেন শ্রমিকরা
‘হামরা গরিব মানুষ, দিন আনিয়া দিন খাই!, এতেই সংসার চলে। এই ঠান্ডায় কাজ না করলে হামরার সংসার চলবার নয়। ঠান্ডা কি হামার অভাব মানবে বাহে!, ঠান্ডার কারণে হাতেত তেমন টাকা পয়সাও নাই যে একখান কম্বল কিনমো।’
বুধবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের বৈরাতী গ্রামে বাইসাইকেল চালিয়ে মাঠে যাওয়ার পথে কয়েকজন কৃষি শ্রমিক এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
ঠান্ডায় কোথায় যাচ্ছেন- এমন প্রশ্নে তারা বলেন, ‘ঠান্ডাত কি ঘরে থাকলে হামাক ভাত দিবে? কাজ করি চলা লাগবে। রোদ, ‘বৃষ্টি কিংবা শীত কোনো কিছুতেই ঘরে বসে থাকি না। প্রতিদিন কাজে যেতে হয়। একদিন ঘরে থাকলে সংসার চলে না। পরিবারকে খাবার দিতে পাই না।’
গত কয়েক দিন থেকেই উত্তরের সীমান্তবর্তী তিস্তা ও ধরলা নদীবেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটে কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঠান্ডা উপেক্ষা করে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মাঠে কাজ করছেন। কিন্তু শীতের দাপটে তারা বেশিক্ষণ মাঠে থাকতে পারছেন না। যার ফলে কষ্টে দিন কাটছে তাদের।
বিজ্ঞাপন
নিম্ন আয়ের মানুষ কাজের সন্ধানে বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না। তাদের আয়-রোজগার অনেক কমেছে। অনেকেই রয়েছেন অর্ধাহারে। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় খড়কুটো আগুন জ্বালিয়ে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন। ঠান্ডার কারণে গবাদি পশু পালনেও তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিস্তা ও ধরলা তীরবর্তী মানুষরা অভিযোগ করে বলেন, চরাঞ্চলের মানুষরা বেসরকারিভাবে কিছু সহায়তা পেয়েছে। তবে সরকারি কোনো সহায়তা পাননি। এই শীতে শীতার্ত মানুষকে একটি কম্বল দিয়ে সহযোগিতা করলে হয়তো তারা শীতের কষ্ট থেকে রক্ষা পেতেন। অনেকেই ঠান্ডার কারণে ঘর থেকে বেরোতে পারছেন না। কোনো কাজ-কর্ম করতে পারছেন না। হাতে টাকাও নেই যে বাজার থেকে একটি কম্বল কিনে ব্যবহার করবেন।
চা দোকানি আবুল মিয়া বলেন, ‘কয়েকদিন আগত সকালে সূর্য দেখা গেছিল। এ্যালা (এখন) তাও আর নাই, ঠান্ডায় মানুষ ঘর থ্যাকি বের হবার পায় না।, সরকার নাকি মেলা মাইনসেক কম্বল দিছে। কিন্তু হামার এ্যাত্তি (আমরা এদিকে) কিছু পাইনো না।’
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের তাপমাত্রা রেকর্ড-কিপার সুবল চন্দ্র রায় জানান, সোমবার সকাল ৯টায় এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা কমতে পারে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতের শুরু থেকে জেলার ৫ উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। তার মধ্যে বেশির ভাগ কম্বল চরাঞ্চলে অসহায় মানুষকে দেয়া হয়েছে। যদি কেউ কম্বল না পেয়ে থাকে অবশই থাকে দেওয়া হবে।
আরএআর