টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার হাসপাতালে করোনার ভ্যাকসিন সিরিঞ্জে রেখেই শুধু সুচ ঢোকানো ২০ জনকে শনাক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। রোববার (১ আগস্ট) হাসপাতালে ওই ঘটনার আগে ৪৫৪ জনকে করোনার টিকা প্রদান করা হয়।

পরে এদের মধ্যে ২০ জনের শরীরে করোনার ভ্যাকসিন ছাড়াই সুই পুশ করার ঘটনা ঘটে। এতে ফেলে দেওয়া ২০টি সিরিঞ্জ জব্দ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা এবং দোষী প্রমাণিত হওয়ায় হাসপাতালের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক সাজেদা আফরিনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিকে ঘটনার দুই দিন অতিবাহিত হলেও ওই ২০ জনের কোনো হদিস পায়নি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

গত রোববার এ ঘটনায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জেলার সহকারী সিভিল সার্জনকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। পরে গঠিত কমিটি তদন্তে সত্যতা পেয়ে সোমবার (২ আগস্ট) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

সেই দিন টিকাগ্রহণকারী উপজেলার পাথরাইল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বলেন, অন্যান্যদের মতো আমাকে ভ্যাকসিনের সুঁই পুশ করা হয়েছে। পরে এলাকায় গিয়ে জানতে পারি ভ্যাকসিন ছাড়াই শুধু সুঁই পুশ করা হয়েছে। এতে চিন্তিত হয়ে পড়েছি। এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছি টিকা পেলাম কি না?

শুধু ওই মুক্তিযোদ্ধাই নন, ওই দিন স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স থেকে টিকা নেওয়া ৪৫৪ জন ব্যক্তি পড়েছেন বিপাকে। তারা স্বাস্থ্য বিভাগের এমন অবহেলার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন।

টিকাগ্রহীতা ও তাদের স্বজনরা জানায়, ওই দিন হাসপাতালে গিয়ে অনেক মানুষ করোনার ভ্যাকসিনের টিকা নিয়েছেন। এখন তাদের মধ্যে কে টিকা পেল, কে পেল না? সেটা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। যারা নিয়েছেন তারা তো জানেন না তাদের শরীরে টিকা গিয়েছে কি না। যারা ওই দিন দায়িত্ব পালন করেছেন এবং যে কর্মকর্তারা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন তাদেরকেও আইনের আওয়তায় আনা হোক।

সোমবার সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক সাজেদা আফরিন জানিয়েছিলেন, সেদিন হাসপাতালে অনেক মানুষজন করোনার ভ্যাকসিনের টিকা নিতে আসায় সেখানে অনেক চাপ ছিল। এতে অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাটি ঘটেছিল

দেলদুয়ার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবরা পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. প্রবীর কুমার বলেন, করোনার ভ্যাকসিন ছাড়াই সুঁই পুশ করার পর ফেলে দেওয়া ২০টি সিরিঞ্জ জব্দ করা হয়। এছাড়া ওই ২০ ব্যক্তিকে শনাক্ত করার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন আবুল ফজল মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, ওই দিন যারা হাসপাতালে টিকাগ্রহণ করেছেন (ভ্যাকসিন ছাড়াই) তাদের খুঁজে বের করা খুবই জটিল প্রক্রিয়া। যারা নিয়েছেন তাদের লাভ বা ক্ষতি হয়নি। তারা জানেন না যে, টিকা নিয়েছেন কি না। তাদের খুঁজে বের করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। ওই দিনের টিকাগ্রহণকারীদের তালিকা ধরে তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এদের মধ্যে দু-একজনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। কয়েকজনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। বাকিদের খুঁজে বের করে নিশ্চিত হয়ে তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। দুইজনের মধ্যে এ রকম ভ্যাকসিন দেওয়া ভুল হতে পারে কিন্তু এক সঙ্গে ২০ জনের এমন হবে এটা কল্পনাতীত ঘটনা।

অভিজিৎ ঘোষ/এমএসআর