উদ্বোধনের তিন বছর পর অবশেষে শুরু হয়েছে খুলনা আধুনিক রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম উঁচুকরণের কাজ। বর্তমান উচ্চতা থেকে প্রায় তিন ফুট উঁচু করা হচ্ছে প্ল্যাটফর্ম। ইতোমধ্যে ছয়টি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে চারটির ৫০ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে উঁচুকরণের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

প্ল্যাটফর্ম উঁচু হলে শিশু, বৃদ্ধ, রোগীদের জন্য উঠতে সুবিধা হবে। পাশাপাশি মালামাল উঠানো-নামানো সহজ হবে। এতে দুর্ভোগ কমবে যাত্রীদের। এমনটাই বলছেন রেলওয়ে কর্মকর্তা ও নাগরিক নেতারা।  

এদিকে খুলনাবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষিত আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ শেষ হয় ২০১৮ সালে। নির্মাণের পর জটিলতা থেকে যায় প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা নিয়ে। প্ল্যাটফর্ম নিচু হওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দেয়। স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম উঁচুকরণের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন। পরবর্তীতে চলতি বছরের এপ্রিলে প্ল্যাটফর্ম উঁচুকরণের জন্য কাজ শুরু হয়।

সরেজমিনে ও রেলওয়ের প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুলনা রেলস্টেশনের ছয়টি প্ল্যাটফর্ম দুই ফুট ১১ ইঞ্চি উঁচু করা হবে। এর মধ্যে চারটির কাজ ৫০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। এই চারটি প্ল্যাটফর্মে ঢালাই ও ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি রয়েছে। তবে এখনো ৩ ও ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাজ শুরু হয়নি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী কাজী ওয়ালিউল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে প্ল্যাটফর্ম বিধিমোতাবেক তৈরি করা হয়েছিল। বগিগুলোর কোচ এক এক দেশের হওয়ায় উঁচু-নিচু ছিল। প্ল্যাটফর্মের বিষয়ে রেলওয়ের পক্ষ থেকে কমিটি করা হয়। কমিটি  প্ল্যাটফর্মগুলো উঁচু করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী উঁচু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঝিকরগাছায় করা হয়েছে, এখন যশোর, চুয়াডাঙ্গায় করা হবে।

তিনি বলেন, আধুনিক রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম উঁচুকরণ কাজের চুক্তি হয় চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল। বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে।  প্ল্যাটফর্ম উঁচু হবে ২ ফুট ১১ ইঞ্চি। যা ট্রেনের বগির পাটাতনের সমান হবে। ১ ও ২ নং প্ল্যাটফর্ম উঁচুকরণে গত ২৭ এপ্রিল টেন্ডার পেয়েছে মেসার্স অনিক এণ্টারপ্রাইজ। এ দুটি প্ল্যাটফর্মের সংস্কার কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় কোটি টাকা। বর্তমান কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া ৫ ও ৬ নং প্ল্যাটফর্মের টেন্ডার পেয়েছে এমজেড কনস্ট্রাকশন। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর ৩ ও ৪ নং প্ল্যাটফর্মের টেন্ডার হলেও নোটিফিকেশন অফ অ্যাওয়ার্ড (নোয়া) ইস্যু হয়নি। এখন ১, ২, ৫ ও ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢালাই ও ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি রয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্ল্যাটফর্ম উঁচুকরণের কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, খুলনাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালের এপ্রিলে শুরু হয়। পরে কয়েক দফা সময় বাড়ানো হয়। এতে ব্যয়ও বেড়ে যায়। কাজ শুরুর দিকে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়া এবং প্রকল্পে নতুন পানির ওভারহেড ট্যাংক যুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা যুক্ত হয়। 

এর মধ্যে নকশায় ত্রুটির কারণে নির্মাণাধীন ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের ছাদে ফাটল দেখা দেয়। পরে নকশাকারী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে বুয়েটের প্রকৌশলীদের পরামর্শে প্ল্যাটফর্মের ছাদের দুই দিকে নতুন করে বিম নির্মাণ করা হয়। পরিবর্তন আনা হয় নকশাতেও।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা সফরের সময় ২০১৮ সালের ৩ মার্চ স্টেশনটি উদ্বোধন করেছিলেন। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর সকাল ৮টা ৪১ মিনিটে স্টেশন থেকে চিত্রা এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক মানের খুলনা রেলস্টেশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

তিনতলা স্টেশন ভবন, ১ হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের তিনটি প্লাটফর্ম, ৭৮৪ বর্গমিটারের একটি লিংক করিডোর, সীমানা প্রাচীর, সুবিশাল গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাত রয়েছে। প্রথমতলায় স্টেশন ভবনে ছয়টি টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম ও সহকারী স্টেশন মাস্টারের কক্ষ। দ্বিতীয়তলায় স্টেশন মাস্টারের কক্ষ, রেস্টুরেন্ট, ব্যাংক, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ওয়েটিং রুম, ফাস্টফুড এবং রেল কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা কক্ষ। তৃতীয়তলায় রেলওয়ের প্রকৌশলীদের অফিস কক্ষ রয়েছে। একসঙ্গে ছয়টি ট্রেন স্টেশনে চলাচল করতে পারবে।  

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত খুলনার পুরোনো রেলস্টেশনে ট্রেনে যাত্রী ওঠা-নামাসহ নানা ধরনের ভোগান্তি ছিল। খুলনাবাসী প্রতীক্ষিত আধুনিক রেলস্টেশন পেলেও প্ল্যাটফর্ম নিচু থাকায় দুর্ভোগ থেকেই যায়। পরবর্তীতে কর্মকর্তাদের বার বার বলেছিলাম, ট্রেনের বগি ও প্ল্যাটফর্ম যাতে সমান থাকে। এ বিষয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামও করেছি। অবশেষে তারা প্ল্যাটফর্ম উঁচুকরণের কাজ শুরু করেছে। প্ল্যাটফর্ম সমান হলে শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষদের উঠতে সুবিধা হবে।   

এসপি