ময়মনসিংহে টিকাকেন্দ্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবককে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে

২৫ বছরের কম বয়সী শ্যালককে টিকা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করায় স্বেচ্ছাসেবককে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। তিনি ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ আলম। রোববার (০৮ আগস্ট) সকালে ময়মনসিংহ  নগরীর নওমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় টিকাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

এর প্রতিবাদে নগরীর ৩৩ ওয়ার্ডে একযোগে আধাঘণ্টা টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ রাখেন স্বেচ্ছাসেবীরা। একই সঙ্গে ঘটনার পর কার্যক্রম বন্ধ করে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের টিকাকেন্দ্র থেকে সরে গেছেন ক্লিন আপ বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের ছয় স্বেচ্ছাসেবক। 

ঘটনাস্থলে থাকা স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ আলম তার শ্যালকসহ কয়েকজন তরুণ-যুবক সহকারে টিকাকেন্দ্রে প্রবেশ করে। পরে তিনি ২৫ বছরের কম বয়সী তার শ্যালককে টিকা প্রয়োগের নির্দেশ দেন।

তবে নিয়মবহির্ভূত হওয়ায় তাকে টিকা প্রদানে অপারগতা জানান স্বেচ্ছাসেবকরা। এতে কাউন্সিলর ক্ষিপ্ত হয়ে টিকাগ্রহীতাদের নামের তালিকাসহ অন্যান্য কাগজপত্র ছিনিয়ে নেন এবং স্বেচ্ছাসেবী ধমকাতে থাকেন। এ সময় ওই বুথে দুইজন ছেলে ও দুই মেয়ে স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছিলেন। কাউন্সিলর অকথ্য ভাষায় তাদের গালিগালাজ করতে থাকেন বলে অভিযোগ স্বেচ্ছাসেবীদের। 

পরে কাউন্সিলর ফরহাদ একপর্যায়ে ক্লিন আপ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলা কোর্ডিনেটর উৎসব সিং সাগরের শার্টের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে বুথের বাইরে নিয়ে আসেন এবং গালিগালাজ করেন।

পরে এ ঘটনার প্রতিবাদে ৩৩টি ওয়ার্ডে একযোগে আধাঘণ্টা টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ রাখেন স্বেচ্ছাসেবীরা। সেই সঙ্গে নওমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ওই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা কর্মবিরতি ঘোষণা করে টিকাকেন্দ্র থেকে সরে আসেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিল ফরহাদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারা যে অভিযোগটা করেছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং তারাই আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। এলাকাবাসীর কাছে জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারবেন।

কাউন্সিলর দাবি করে বলেন, যারা রেজিস্ট্রেশন করছেন তারা খুবই ধীরগতিতে কাজ করছেন। তাই গতকাল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম টিকা দিতে পেরেছেন। সে জন্য আমি আরও দুইজন স্বেচ্ছাসেবককে দিতে চেয়েছিলাম। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার কথা-কাটাকাটি হয়। পরে তারা রাগ করে টিকাকেন্দ্র থেকে চলে যায়।

ক্লিন আপ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শুভ্র চক্রবর্তী জানান, ঘটনার পর সিটি মেয়রসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। সিটি মেয়র ঘটনার সুরাহা করবেন বলে আশ্বস্ত করা হলে আধাঘণ্টা পর নগরীতে টিকাপ্রদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। তবে ওই কেন্দ্র থেকে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা সরে এসেছেন।

সংগঠনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান ফয়সাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। স্বেচ্ছাসেবকরা যেখানে নিজের জীবন বাজি রেখে করোনা প্রতিরোধে দিনের পর দিন কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে এমন ব্যবহারের প্রতিবাদ জানাই।

সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, আমি জানতে পেরে ওই কাউন্সিলরকে টিকাকেন্দ্র ত্যাগ করতে বলেছি। স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা টিকাদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালু রেখেছেন। ওই ব্যাপারটি নিয়ে বিকেলে কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে বৈঠকে বসব।

উবায়দুল হক/এমএসআর