হাইকোর্ট (ফাইল ছবি)

এক মাসের শিশুসন্তানসহ রাজশাহীর সেফহোম ছেড়েছে বগুড়ার পনেরো বছরের কিশোরী মা। বুধবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে কোলে শিশুসন্তান নিয়ে শ্বশুর সাইদুর রহমানের সঙ্গে ওই কিশোরী সেফহোম ছেড়ে যায়।

জানা গেছে, বগুড়ার শিবগঞ্জের অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া ওই কিশোরী ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর জেএসসি পরীক্ষা শেষে নানাবাড়ি বেড়াতে যায়। পরদিন নানির সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে একই এলাকার বাসিন্দা মিন্টু মিয়া (২১) তাকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মিন্টুসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের জুনে বগুড়ার শিবগঞ্জ থানায় মামলা করেন মেয়েটির বাবা।

উদ্ধারের পর থেকে কিশোরী তার বাবার কাছেই ছিল। তবে সন্তান হওয়ার পর তাকে বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয়। ওই সময় মিন্টু তার স্ত্রীকে নিজ হেফাজতে নিতে আবেদন করেন। ওই আবেদন নামঞ্জুর করে শিশুসহ ভুক্তভোগীকে রাজশাহীর সেফহোমে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

ওই মামলায় ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ঘটনার এক বছর পর গত ২০ ডিসেম্বর মিন্টু ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। কিন্তু আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। 

এর আগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয় ভিকটিম কিশোরী। ওই জবানবন্দিতে ভিকটিম দাবি করে, আসামি মিন্টুসহ ৪-৫ জন তাকে অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে যায়। পরে জোরপূর্বক বিয়ে ও শারীরিক সম্পর্ক করে। তাকে পরিবারের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগও করতে দেয়নি। 

আদালতের নির্দেশে পরে ওই কিশোরীর মেডিকেল পরীক্ষা হয়। সেখানে ভিকটিম দাবি করে, আসামির সঙ্গে তার আড়াই মাসের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার দিন তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। উভয়ের সম্মতিতে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।  

এদিকে, নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে বিফল হয়ে হাইকোর্টে আপিল করে জামিন চান অভিযুক্ত মিন্টু মিয়া। এর পর গত ৭ জানুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মিন্টু মিয়ার এক বছরের জামিন দেন।

একই সঙ্গে সেফহোমে পাঠানো সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালের আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্ট ভুক্তভোগীকে তার ইচ্ছা অনুসারে বাবা-মা কিংবা স্বামীর জিম্মায় মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে বাবা-মায়ের কাছে না গিয়ে ওই কিশোরী সন্তানসহ শ্বশুরের সঙ্গে সেফহোম ছেড়ে গেছে বুধবার।

রাজশাহী সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাসিনা মমতাজ সেফহোম থেকে ওই কিশোরীর মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ১০ জানুয়ারি ওই কিশোরীর মুক্তি সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের কপি তাদের হাতে এসে পৌঁছায়। এরপর তার সব প্রক্রিয়া শেষে বিকেলের দিকে তিনি বেরিয়ে গেছেন।

এমএসআর