গোমস্তাপুরে দেবে গেছে রাস্তার ইট

কোথাও হাঁটুভর্তি কাদা, কোথাও পানি। আবার কোথাও বালুর ভরাট। দুই ধারে ফসলি জমি দেখে মনে হবে মধ্য দিয়ে ছোট যান চলাচলের মাটির রাস্তা। অথচ এখানে থাকার কথা ছিল দুই স্তরের মজবুত ইটের রাস্তা। ১৫ দিন আগে মাত্র ২০০ মিটার ইটের তৈরি রাস্তার জন্য ব্যয় করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।

কিন্তু সোমবার (০৯ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে কোনো ইটের রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বিশুক্ষেত্র-গোঙ্গলপুর মাঠে ফসলি জমিতে পাশেই চলছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণকাজ।

অন্য রাস্তার সঙ্গে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার সংযোগ স্থাপন ও নির্মাণসামাগ্রী পরিবহনের কাজে ব্যবহারের জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। গোমস্তাপুর উপজেলা এলজিইডি ১০ লাখ টাকা ব্যয় করে রাস্তাটি নির্মাণ করে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, পর্যাপ্ত পরিমাণে উপকরণ না দেওয়া, নিচে ভরাট বালু কম দেওয়া, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখার কারণে এমন দশা।

তারা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও কাজে গাফিলতির কারণে ১০ লাখ টাকার রাস্তার কোনো সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। বরাদ্দ হলেও তার সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি। ৮ ফিট প্রসস্থবিশিষ্ট রাস্তাটি নামে থাকলেও কোনো কাজে আসছে না

আশ্রয়ণ প্রকল্পে কাজ করা এক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তার কাজ শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত আমি পাশেই সরকারি ঘর নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করছি। আমাদের কাজের এখানে রড, বালু, সিমেন্ট, ইট নিয়ে আসার জন্যই রাস্তাটি করা হয়েছে। কয়েকদিন হলো রাস্তার কাজ শেষ হওয়া। অথচ এখন খুঁজেই পাওয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, নিজের চোখে দেখা কাজ এটা। নিশ্চিত করে বলতে পারি কাজ ভালো হয়নি। কারণ যারা ইঞ্জিনিয়ার তারা কি জানে না, যে রাস্তাটি কী কাজে ব্যবহার করা হবে? তাহলে সেভাবে রাস্তা করতে হতো। শুনলাম এইটুকু রাস্তায় নাকি ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব? নিচে ঠিকমতো বালু ভরাট করা হয়নি। যতটুকু দরকার, তার থেকে কম পরিমাণে বালু দিয়েই ইট বিছানো হয়েছে।

রাস্তাসংলগ্ন জমিতে ধান চাষাবাদ করেন কৃষক কাউসার আলী। তিনি বলেন, টিভিতে দেখেছি, সরকারি ঘরগুলো ভেঙে পড়ছে। মনে হয়, রাস্তাও সেভাবেই তৈরি হয়েছে। কাঁচা মাটিতেই ভরাট না দিয়ে রাস্তা করার কারণে এমনটা হয়েছে। এখানকার আবাদি মাটিগুলো একটু অন্যরকম। এখানে মাটি খুঁড়ে রাস্তা করাটা সবচেয়ে বোকামি। মাটির ওপরেই বালু ভরাট করে ইটের রাস্তা করলে এমন অবস্থা হতো না। 

গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীন জামাল মন্ডল বলেন, আমি রাস্তা তৈরির সময়েই বলেছিলাম, আগে ইট দিয়ে রাস্তা ঘিরতে হবে। তা না হলে পাশের ফসলি জমির পানি ও বৃষ্টির পানি এসে রাস্তা নষ্ট হবে। রাস্তা নির্মাণের পরে তা-ই হয়েছে। বৃষ্টির পানি এসে রাস্তা দেবে গেছে। পরে আমি নিজ খরচে রাস্তার পাশ দিয়ে পানি নামার জন্য ড্রেন নির্মাণ করেছি।

গোমস্তাপুর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী নূরুল আফসার মোহাম্মদ সুলতানুল ইমাম বলেন, পুরাতন মাটির রাস্তার ওপর পুনরায় ইটের রাস্তা নির্মাণ করলে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে ধানের জমির ওপর দিয়ে রাস্তাটি করা হয়েছে। নরম, কাঁদা মাটিতে রাস্তা করার কারণে গাড়ি চলতে গিয়ে দেবে গেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সঙ্গে সংযোগ ও নির্মাণসামগ্রী নিয়ে যেতেই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এটি এলজিইডি নির্মাণ করেছে। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।

গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন রেজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাঁদামাটি ও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে রাস্তাটির এমন দশা হয়েছে। অতি জরুরি ভিক্তিতে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু রাস্তা নির্মাণের আগে ও পরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় দেবে গেছে।

জাহাঙ্গীর আলম/এমএসআর