আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) সারিয়াকান্দি-জামালপুর নৌরুটে সি-ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধন হবে। দিনে দুবার চলাচল করবে সি-ট্রাক। যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়লে তা দিনে চারবারে উন্নীত করা হবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। আর এর ছয় মাস পর চালু হবে ফেরি সার্ভিস।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মির্জা আজম এবং সাহাদারা মান্নান উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে বগুড়া সারিয়াকান্দির কাজলা ইউনিয়নের জামথল ঘাটে অবতরণ করবেন। ১১টা ৩০ মিনিটে তিনি জামালপুর-সারিয়াকান্দি নৌপথে সি-ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধন এবং মতবিনিময় সভা শেষে ১১টা ৩৫ মিনিটে সি-ট্রাক যোগে সারিয়াকান্দির উদ্দেশে যাত্রা করবেন। দুপুর ১২টায় সারিয়াকান্দি কালিতলা ঘাটে মতবিনিময় অনুষ্ঠান শেষে সাড়ে ১২টায় আবার ঢাকায় উদ্দেশ্য রওনা করবেন।

উদ্বোধনের জন্য মঙ্গলবার বিকেলে একটি সি-ট্রাক সারিয়াকান্দিতে নিয়ে আসা হয়েছে। সি-ট্রাকটি একনজর দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করছে। উদ্বোধন উপলক্ষে দুই পাড় বিভিন্ন ধরনের ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে ভরে গেছে। নির্মাণ করা হয়েছে সুসজ্জিত মতবিনিময় মঞ্চ।

ফেরি সার্ভিস চালু এবং সি-ট্রাকের উদ্বোধনের খবরে দুই পাড়ের লোকজনদের মাঝে সাজসাজ রবরব অবস্থা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে তোরণ নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ব্যানার আর ফেস্টুন দিয়ে ভরে গেছে খেয়াঘাট এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো।

সি-ট্রাক চালুর খবরে দুই পাড়ের মানুষদের মাঝে আনন্দের জোয়ার বইছে। জোয়ার বইছে বগুড়া জেলা থেকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝেও। এই নৌপথ চালু হলে কম সময়ে উত্তরাঞ্চলের মানুষ ময়মনসিংহ রাজধানী ঢাকায় যেতে পারবে। নৌপথটি চালু হলে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকার দূরত্ব কমবে ৮০ কিলোমিটার।

সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ নৌপথে ফেরি চালুর জন্য ফেরিঘাট নির্মাণ, সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, নাব্যতা ফেরাতে নদী খননসহ নদী সংস্কার ও উন্নয়নকাজে প্রকল্প গ্রহণের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল গত ২৬ মে সারিয়াকান্দি ও মাদারগঞ্জ এলাকা পরিদর্শন করেছে। জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল ফেরি চালুর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আইডব্লিউএমের পরামর্শক মো. মহিউদ্দীন পাটোয়ারি।

বুধবার দুপুরে (১১ আগস্ট) স্থানীয় সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান বলেন, আগামীকাল ১২ আগস্ট নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দুই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মানুষ এবং মাঝারি যানবাহন নিয়ে সি-ট্রাক সার্ভিস চালু হলেও ভবিষ্যতে ভারী ফেরি সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই নদীর দুই প্রান্তে আধুনিক টার্মিনাল, সড়ক প্রশস্তকরণ, নদী ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে পদ্মা সেতু চালু হলে সেখানকার যেসব ফেরি অব্যবহৃত থাকবে, সেগুলোকে এ পথে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সি-ট্রাকের ইজারাদার জানান, বিআইডব্লিউটিসির আব্দুর রউফ সেরনিয়াবাত নামে অত্যাধুনিক সি-ট্রাকটি এসি কেবিনসহ দুই শতাধিক যাত্রী ও মাঝারি যান নিয়ে দিনে দুবার চলাচল করবে। যাত্রীর চাপ বেশি হলে দিনে চারবার চলাচল করার চিন্তা রয়েছে। ফেরি চালু হওয়ায় একদিকে খরচ ও সময় কমে আসবে, অন্যদিকে ঝুঁকিও থাকছে না।

এ বিষয়ে নৌপরিবহনসচিব মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমার জানামতে ওখানে সি-ট্রাক চালু হবে। তবে এ ব্যাপারে তিনি বিআইডব্লিউটিসির সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক বাণিজ্যিক এ এস এম আশিকুর রহমান জানান, ফেরি সার্ভিস না, প্রথমে আমরা সি-ট্রাক চালু করব। তারপর ছয় মাস পর ফেরি সার্ভিস চালু করা হবে। তবে ফেরি সার্ভিস বা সি-ট্রাক যেটাই হোক, এটি হবে উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের বাস্তব প্রতিফলন।

সাখাওয়াত হোসেন জনি/এনএ