কয়েক দশক আগেও বরেন্দ্র অঞ্চল দেশের মরুভূমি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এসব রুক্ষ লাল মাটিতে এখন সোনালি ফসল উৎপাদন হয়। বছরের কোনো সময়ই এখন অনাবাদি পড়ে থাকে না বরেন্দ্র অঞ্চলের এক টুকরো জমিও। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে একসময়ের মরুভূমি এখন পরিণত হয়েছে সবুজের সমারোহে।

বরেন্দ্র অঞ্চলের এই পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের কথা ভেবে তিন যুগ আগে বিএমডিএ প্রতিষ্ঠা করার পর এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা ও কৃষি খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে।

পুকুর পুনঃখনন ও ভূগর্ভস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচে ব্যবহার এসডব্লিউআইপি প্রকল্পের আওতায় বৃক্ষরোপণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অতিথিরা। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) আয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রান্তে সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের গনসাপাড়া-উখড়া গ্রামে বিএমডিএর পুকুরের ধারে বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হয়।

বুধবার (১১ আগস্ট) দুপুরে প্রকল্প পরিচালক মো. শরীফুল হকের সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে এর উদ্বোধন করেন বিএমডিএর চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান। অনুষ্ঠানের শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও বগুড়া অঞ্চলে বিএমডিএর খনন করা পুকুরের ধারে বৃক্ষরোপণ করা হয়।

বেগম আখতার জাহান বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের পুকুর খননের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের পানির সঠিক ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। এতে বরেন্দ্র অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীরা এসব পুকুরে গোসল করাসহ এর পানি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারছে। খরাপ্রবণ এলাকায় পানির উৎস নিশ্চিত হওয়ায় এর সুবিধা পাচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের লাখ লাখ বাসিন্দা। এতে তারা জমি চাষাবাদসহ, অনাবাদি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে।

কৃষকদের উন্নয়নে বিএমডিএ কাজ করছে উল্লেখ আখতার জাহান বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে বিএমডিএর খনন করা এসব পুকুরের ধারে বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করা হলো। এতে তারা আরও বেশি উপকৃত হবে। পরিবেশের পাশাপাশি নানা প্রয়োজনে গাছ লাগার কোনো বিকল্প নেই। একটা গাছ কাটলে আরও দুটি গাছ লাগাতে হবে।

বিভিন্ন দুর্যোগ থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করে সুন্দরবন। তাই এখানেও আমাদের অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলের পাশাপাশি শহরের ফাঁকা জায়গাতেও গাছ লাগানোর প্রতি গুরুত্ব দেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএমডিএ নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুর রশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে সবুজায়নে পরিণত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম পরিবেশবান্ধব সবুজ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আমরা দেখেছি, বরেন্দ্র এলাকায় খরায় প্রতিকূল অবস্থা বিরাজ করত। গাছপালা, ফসল তেমন উৎপাদন করা যেত না। তাই রুক্ষ, খরাপ্রবণ এলাকায় বছরে কীভাবে একাধিক ফসল উৎপাদন করা যায়, সে লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে বিএমডিএ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রান্ত থেকে অতিথি ছিলেন বিএমডিএ চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম, গোবরাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আরাফুল ইসলাম আজিজি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএমডিএর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, স্থানীয় সুবিধাভোগী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে কাজ করছে।

মো. জাহাঙ্গীর আলম/এনএ