সোনালি আঁশে সুদিন ফিরছে কিশোরগঞ্জের কৃষকদের
সোনালি আঁশখ্যাত পাটে সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। বাজারে ভালো দাম আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিশোরগঞ্জে দিন দিন বাড়ছে পাটের চাষ। ফলে জেলার কৃষকদের মুখেও হাসি ফুটছে।
জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতেই পাট বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। জেলার হাট-বাজারগুলোতে প্রতি মণ পাট ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভালো ফলন ও আশানুরূপ দাম পেয়ে গত বছরগুলোতে লোকসানে পড়া কৃষকদের মুখে সন্তুষ্টির হাসি দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
ফসলের খেত, নদী বা খালের পাড়, রাস্তার ধারে এমনকি কৃষকের বাড়ির উঠান সবখানেই পাট কাটা, ধোঁয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকরা। কিশোরগঞ্জের প্রতিটি গ্রামেই এখন এই দৃশ্য চোখে পড়ছে। পাট শুকানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বাঁশের আড়া ও ব্রিজের রেলিং।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, বৃহত্তর হাওরাঞ্চলের গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ জেলাকে ধান এবং পাটের অফুরন্ত ভাণ্ডার বলা হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে এসব ফসলের উৎপাদন ও দামের তারতম্য থাকায় এসব চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন জেলার অধিকাংশ কৃষক। তবে গত বছর থেকে পাটের বাজার মূল্য ভালো হওয়ায় জেলায় এবার আবাদ বেড়েছে। বর্তমান বাজারে নতুন পাট প্রকারভেদে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এ মৌসুমে জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন। তবে আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এ জেলায় আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ফলনও হয়েছে বাম্পার।
পাটচাষি আবুল কাশেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর যখন আমরা পাট চাষ করেছিলাম তখনো পাটের দাম বেশি আছিল। এ বছর পাট বেশি করে চাষ করেছি। এবার দাম আরও বেশি। আজকে আমি ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। আমার পাট আরও রয়েছে। পরে বিক্রি করব।
পাটচাষি সাদেক আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কৃষক মানুষ। ধান চাষে যে খরচ হয় তাতে লাভবান হাওয়া যায় না। দুই বছর ধরে আমার পাট চাষ করি। গতবারও পাটের ভালো দাম পেয়েছি। এবারও পাটের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারও ভালো। আমরা খুব খুশি।
কটিয়াদী বাজারে পাট নিয়ে এসেছেন মফিজুল হক। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বাজারে ১৬ মণ পাট দিয়ে এসেছি। ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছি। পাটের ভালো দাম পাওয়াতে আমরা খুব খুশি।
কটিয়াদী বাজার পাট ক্রয় সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাটের বর্তমান বাজার চলছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ। বলা যায়, কৃষক পাট সোনার দামেই বিক্রি করছে। তবে আমাদের ব্যবসায়ীদের টাকা বিজেএমসিসহ বেসরকারি কোম্পানিতে পড়ে আছে। আমরা পাটের বকেয়া টাকা না পেয়ে দিশেহারা অবস্থায় রয়েছি। বকেয়া টাকা পেতে আমি সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (খামার বাড়ি) উপ-পরিচালক ছাইফুল আলম জানান, এ মৌসুমে জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন। পাট আবাদ ধান আবাদের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। চাষ করে লাভবানও হচ্ছে। পাটের যে সোনালি ঐতিহ্য ছিল তা জেলায় ফিরে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। এই লক্ষ্যেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কাজ করে যাচ্ছে।
এসপি