দোলেনা বেগমের (৫০) দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তারা জন্মের পর থেকেই মানসিক প্রতিবন্ধী। তার স্বামী রঞ্জন মিয়া (৬০)। তিনিও মানসিক প্রতিবন্ধী। পরিবারের পাঁচ ভারসাম্যহীন সদস্যকে পরিচালনার ভার যার হাতে, তিনি কি আর মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন? তাই নিজের সক্ষমতার ভারসাম্যটুকু ধরে রেখে পাঁচ সদস্যকে নিয়ে অব্যক্ত কষ্টে দিন পার করছেন দোলেনা।

ভূমিহীন এ পরিবারটির নেই কোনো আয়ের উৎস। ছয় মাস পরপর প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি ভাতা বাবদ যে টাকা পান, তা দিয়েই চলছে কোনোরকমের সংসার।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের গাবুর হেলান গ্রামে বাস করেন রঞ্জন-দোলেনা দম্পতি। অসহায় এ পরিবারটিকে স্থানীয়রা কিছুটা সহায়তা করলেও সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা ও চিকিৎসার আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রঞ্জন মিয়া একজন ভূমিহীন। তার মেয়ে রনজি (২৫) ও অজিফা (১৫), ছেলে দেলোয়ার (২০) ও দানিয়েল (১৪) জন্মগতভাবেই মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই তাদের নিয়ে বড় বিপাকে রয়েছেন দোলেনা। পরিবারে খাবারের জোগান দিতে তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তা ছাড়া নিজেদের কোনো জায়গা-জমি না থাকায় থাকছেন অন্যের জমিতে।

কথা হলে রঞ্জনের স্ত্রী দোলেনা বেগম বলেন, আমরা খুবই সমস্যার মধ্যে আছি। আমার বাপ-মা গরিব। বাপে আমাক পাগল লোকটার সাথে বিয়ে দিছে। এ কারণে কোনো কাজকার্ম করতে পারে না। একদিন ভিক্ষা করে তো সাত দিন বসে থাকে। আমি চারটা ছেলে-মেয়েক নিয়া খুব কষ্ট করি চলছি। ছেলে-মেয়েদের মাথার ব্রেইন খারাপ। তারা মারামারি করে সারাদিন। তা ছাড়া আমাদের জায়গা-জমি নাই, খুব কষ্টে আছি। প্রতিবন্ধীর ভাতা যা পাই, তা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে।

স্থানীয় রোকেয়া বেগম বলেন, রঞ্জন নিজে অসুস্থ। তার দুই ছেলে, দুই মেয়েও অসুস্থ। তাদের জায়গা-জমিও নাই। মানুষের জমিতে কোনোরকম ঘর তুলে থাকছেন। খুব কষ্টে যায় তাদের দিন। কেউ কাজকর্ম করে না। রঞ্জনের স্ত্রী মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। সরকার যদি একটু সহযোগিতা করত, তাদের অনেক উপকার হতো।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. তাইজুল ইসলাম বলেন, রঞ্জনের পরিবারে সবাই মানসিক ভারসাম্যহীন। তাদের কোনো নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি নেই। আমি চারজনকে ভাতার আওতায় নিয়ে এসেছি। সব সময় তাদের সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করি। সরকারি সব ধরনের সহযোগিতা তারা পাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের যে ঘর উপহার দিচ্ছেন, আমার ইউনিয়নে ঘরের বরাদ্দ পেলে রঞ্জনকে সেই ঘরের আওতায় আনা হবে।

রাজারহাট উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান মন্ডল জানান, একই পরিবারে পাঁচজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি আছেন, এটা আমার জানা নেই। এখন জানলাম। আমি তাদের খোঁজখবর নেব। তারা যদি ভাতা না পান, তাদের ভাতার আওতায় আনা হবে।

তাদের অসুস্থতা সম্পর্কে কথা কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, ওই পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ দেওয়া হবে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

মো. জুয়েল রানা/এনএ