শিশু নাবিল হত্যা : পুলিশকে সিসি টিভি ফুটেজ দেননি উপতত্ত্বাবধায়ক
সিলেটে সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত ছোটমণি নিবাসে দুই মাস ১১ দিনের শিশুকে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুলিশকে সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেননি নিবাসের উপতত্ত্বাবধায়ক রূপন দেব। দুইবার আবেদন করেও ফুটেজ না পাওয়ায় পরে পুলিশ নিজস্ব অপারেটর নিয়ে ফুটেজ উদ্ধার করে। এরপর ফুটেজ দেখে শিশু নাবিলকে হত্যার প্রমাণ মেলে।
এ ঘটনায় গ্রেফতার আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন- ছোটমণি নিবাসের উপতত্ত্বাবধায়ক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রূপন দেবের নির্দেশে তিনি ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
বিজ্ঞাপন
ফলে আলাদাভাবে ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এতে যারা জড়িত থাকবেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ।
ওসি জানান, ২৩ জুলাই সকালে ছোটমণি নিবাসে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন নিবাসের উপতত্ত্বাবধায়ক রূপন দেব। মামলায় উল্লেখ করা হয় ২৩ জুলাই সকালে নিজ শয্যায় ২ মাস ১১ দিন বয়সী এক শিশুকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মামলায় এসআই নূর মোহাম্মদকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি ২৮ জুলাই নিবাসে গিয়ে সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ চান। তখন তাকে লিখিত আবেদন করার কথা বলা হয়। তিনি লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু ফুটেজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে বলে আটকে রাখা হয়।
বিজ্ঞাপন
নূর মোহাম্মদের কর্মস্থল পরিবর্তন হলে নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন এসআই মাহবুব মন্ডল। তিনি ১০ আগস্ট সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজের জন্য আবার লিখিত আবেদন করেন। এরপর অপারেটর নেই বলে দুইদিন কালক্ষেপণ করা হয়। পরে ১২ আগস্ট রাতে থানার নিজস্ব অপারেটর নিয়ে ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজ দেখে প্রাথমিকভাবে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়।
ওসি আরও বলেন, ছোটমণি নিবাসের উপতত্ত্বাবধায়কসহ তার দফতরের কর্মকর্তারা ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে আদালতে জবানবন্দিতে উপতত্ত্বাবধায়ক রূপন দেবের নির্দেশে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার কথা বলেছেন আয়া সুলতানা। তিনি সব কিছু জেনে অপমৃত্যু মামলার বাদী হয়েছেন। অন্যদিকে সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দিতে টালবাহানা করেছেন।
গত ১২ জুন গোয়াইনঘাট থেকে নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধার করে ছোটমণি নিবাসে দেয় পুলিশ। শিশু নিবাসে আসার পর শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল নাবিল আহমদ। গত ২৩ জুলাই সকালে নিজ শয্যায় ২ মাস ১১ দিন বয়সী এক শিশুকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন উপতত্ত্বাবধায়ক রূপন দেব। ঘটনার ২০ দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ছোটমণি নিবাসের সিসি টিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ ঘটনাটি হত্যা বলে নিশ্চিত হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকাকে তাৎক্ষণিক আটক করা হয়। পরে শুক্রবার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন শনিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন অভিযুক্ত সুলাতানা।
এ ব্যাপারে ছোটমণি নিবাসের উপতত্ত্বাবধায়ক রূপন দেবের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তুহিন আহমদ/আরএআর