পর্যটন কেন্দ্র খোলায় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা

করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর সীমিতভাবে ১৯ আগস্ট থেকে খুলছে খাগড়াছড়ির সব পর্যটন কেন্দ্র। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পর্যটন কেন্দ্র খোলায় সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন হোটেল মোটেলসহ পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এতে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন যেমন বুনছে মালিকপক্ষ, তেমনি হোটেল-মোটেলের কর্মচারী ও গাড়িচালকদের আয়ের পথ সুগম হচ্ছে।

তবে পর্যটন কেন্দ্রে আসা পর্যটকদের মানতে হবে বিধিবদ্ধ স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক ছাড়া কেউ পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস।

ট্যুরিস্ট স্পটের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তাদের পর্যটক স্বাস্থ্যবিধি পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হোটেলে-মোটেলগুলোতেও একই নির্দেশনা রয়েছে। তবে জেলায় পর্যটনের কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়লে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়, ঝিরি, ঝরনা, অরণ্যেও সবুজ জনপদ খাগড়াছড়ি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ জেলার সব পর্যটন কেন্দ্র। এতে জেলার পর্যটন খাতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বেকার হয়েছে অন্তত ১০ হাজার মানুষ।

করোনা সংক্রমণ কমে আসায় সারাদেশের মতো খাগড়াছড়ির সব পর্যটন কেন্দ্র খুলছে। পর্যটন কেন্দ্র খোলায় সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা। তবে আগত পর্যটকদের মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক পরিধান ছাড়া পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না, পর্যটন কেন্দ্রগুলোর প্রবেশমুখে থাকবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। সাবান দিয়ে পর্যটকদের হাত জীবাণুমুক্ত করতে হবে। শারীরিক অসুস্থ অবস্থায় পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করা যাবে না। এ ছাড়া হোটেলের কক্ষে পর্যটকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ইউনিট ব্যবস্থাপক এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় পাঁচ মাস পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকার সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৯ আগস্ট থেকে পর্যটন কেন্দ্র খুলবে। পর্যটকদের বরণে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। তবে আগত পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক ছাড়া কোনো পর্যটক কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। এ ছাড়া হোটেলের কক্ষে পর্যটকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ির আবাসিক হোটেল গাইরিংয়ের ম্যানেজার প্রান্ত ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ি জেলায় পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার খবরে আমরা পুরো হোটেল নতুন করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি। আশা করি যখন পর্যটক আসবে, তখনই সেবা দিতে পারব। সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছি।

চাঁদের গাড়িচালক সজীব চাকমা বলেন, অনেক দিন পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকার কারণে আমরা গাড়ি চালাতে পারিনি। এখন খুলে দেওয়ার ফলে গাড়ি চালাতে পারব। সংসার চলবে আগের মতো করে। দেখা হবে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের সাথে। আমরা চেষ্টা করব আগে যেমন পর্যটকদের সেবা দিয়েছি, তার চেয়ে বেশি দিতে। যাতে ঘুরতে আসা মানুষগুলো তৃপ্তি নিয়ে ঘুরতে পারে।

সাজেকে আবাসিক হোটেলে কাজ করা মো. মুসা জানান, অনেক দিন হয়ে গেল বাড়িতে বেকার হয়ে বসে আছি। কোনো কাজকর্ম ছিল না। এখন আবার সাজেক খুলে দিচ্ছে চাকরিতে যোগ দেব। বেকারত্ব দূর হবে কিছুটা। আশা করি এবার কিছুদিন শান্তিমতো চাকরি করে নিজের জীবন সুন্দরভাবে চালাতে পারব।

খাগড়াছড়ির সিস্টেম রেস্টুরেন্ট মালিক মং মারমা জানান, করোনায় আমাদের ক্ষতি অপূরণীয়। সে কথা বলে আর কী হবে। অনেক দিন বন্ধ থাকায় কর্মচারীদের বেতন চালাতে খুব হিমশিম খেতে হয়েছে। এখন খুলে দেওয়ার কারণে লোকজন আসা শুরু করেছে। যদি সবকিছু স্বাভাবিক থাকে, তাহলে আগের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে পারব। আমরা চেষ্টা করব স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার মাঝে সুন্দর সেবা দিতে।

উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ রোধে গত ১৯ মার্চ খাগড়াছড়ির সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।

মো. জাফর সবুজ/এনএ