সহিদুর রহমান খান‌

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা সা‌বেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান‌কে হাসপাতা‌লে ভ‌র্তি করা হ‌য়ে‌ছে। বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে হঠাৎ বু‌কে ব‌্যথা অনুভব করায় তাকে কারাগার থে‌কে টাঙ্গ‌াইল জেনা‌রেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

সহিদুর রহমান খান‌ বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় কারাগা‌রে ছি‌লেন। একই মামলায় তার বড় ভাই টাঙ্গাইল-৩ আস‌নের সা‌বেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা প্রধান আসামি।  

জানা গে‌ছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর দীর্ঘ ছয় বছর পলাতক ছিলেন টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান। এরপর গত বছরের ২ ডিসেম্বর তিনি টাঙ্গাইল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। প‌রে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এরপর থেকেই তিনি টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে বন্দি আছেন।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) এ হত‌্যা মামলায় হা‌জির হ‌য়ে জা‌মিন আবেদন কর‌লে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাসুদ পারভেজ শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এ নিয়ে টানা ১২ বারের মতো সহিদুর রহমান খানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়।

টাঙ্গাইল কারাগা‌রের জেল সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সহিদুর রহমান খান সকালে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন। এ কারণে কারাগারের চিকিৎসক তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শে‌ষে তা‌কে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শফিকুল ইসলাম জানান, দুপুরে কারা কর্তৃপক্ষ সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খানকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। প‌রে হাসপাতা‌লের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এরপর তাকে একটি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। 

টাঙ্গাইল জেনা‌রেল হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসক প্রণব কুমার কর্মকার জানান, সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খানের বুকের ব্যথা পিঠে ছড়িয়ে পড়ছে। তার শ্বাসকষ্টসহ রক্তচাপ বেড়েছে। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখাসহ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর তার চিকিৎসার ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উল্লেখ, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। পরবর্তীতে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে গোয়েন্দা পুলিশ রাজা ও মোহাম্মদ আলীর নামে দুইজনকে গ্রেফতার করে। 

ওই দুই আসামির জবানবন্দিতে এই হত্যার সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সা‌বেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাসহ তার অপর তিন ভাই পৌরসভার সা‌বেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এরপরই সাবেক সংসদ সদস্য রানা ও তার ভাইয়েরা আত্মগোপনে চলে যান। ২২ মাস পলাতক থাকার পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সাবেক রানা আদালতে আত্মসর্মপণ করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। প্রায় তিন বছর কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্ত হন। তবে তার অন্য দুই ভাই এখনো পলাতক। 

অভি‌জিৎ ঘোষ/আরএআর