গ্রেনেড হামলায় নিহত আতিকের সন্তানদের চাকরি দেওয়ার কথা ছিল
বাবাকে হারিয়ে আজ আমার সন্তানরা এতিম। প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় তিন ছেলে ও এক মেয়ের মুখে দুই বেলা ভাত তুলে দিতে পারলেও বাবার অভাব পূরণ করতে পারিনি। আজও তারা বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলে।
এভাবেই বলছিলেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার পাঁচআনী গ্রামের আতিক উল্লাহর স্ত্রী লাইলী বেগম।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ৪ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী আমার দুই সন্তানকে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ৪ বছর পার হলেও এখনো মেলেনি চাকরি। তাই এতিম সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে আমি শঙ্কিত।
নিহত আতিক উল্লাহর বড় ছেলে মো. মিথুন সরকার জানায়, এখনো খুঁজি আমরা বাবাকে। রাতের আঁধারে মায়ের কান্না আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বাবার সব স্মৃতি। তখন মনের অজান্তেই হারিয়ে যাই বাবার সান্নিধ্যের অপার আনন্দের দিনগুলোতে। আর তখনই দুচোখ বেয়ে বেরিয়ে পড়ে অশ্রু। তিনি বলেন, বাবার অভাব আমরা প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করি।
বিজ্ঞাপন
নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মতলব উত্তরের আতিক ও হাইমচরের কুদ্দুছের শোকে কাতর স্বজনরা। প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা এখনো তাদের কাঁদায়। তবে সরকারিভাবে তাদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।
এদিকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঘটে যাওয়া গ্রেনেড হামলার রায় হলেও পুনরায় আপিল করায় এখন হাইকোর্টে তা বিচারাধীন। এমতাবস্থায় বিচারের রায় দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন ওই ঘটনায় নিহত চাঁদপুরের মতলব উত্তরের পাঁচআনী গ্রামের আতিক উল্ল্যাহ ও হাইমচর উপজেলার আবদুল কুদ্দুছের স্বজনরা। দীর্ঘ ১৬ বছরেও এ হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য শেষ না হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
যদিও ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই দুই পরিবারেকে ১১ লাখ টাকা করে অনুদান দেন। এরপর পুনরায় গত ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল আতিক উল্লাহর ৪ সন্তান ও স্ত্রীকে ২৫ লাখ টাকা এবং কুদ্দুছের ৮ ভাই-বোনকে ১৬ লাখ টাকা দেন। যা দিয়ে তাদের পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
অপরদিকে, ওই হামলায় নিহত হাইমচরের আব্দুল কুদ্দুছ ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তার স্বজনরা।
কুদ্দুছের বড় ভাই হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ছেলে হত্যার বিচারের প্রতীক্ষায় থেকে ২০১৬ সালে মারা যান আমার মা আমেনা বেগম। অবশেষে রায় হলেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় চিন্তিত আমরা। তাই আশা করছি আমার মা ভাইয়ের আত্মার শান্তির জন্য যত দ্রুত সম্ভব বিচারের রায় কার্যকর করা হোক।
মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কুদ্দুছ জানান, শুধু কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়েই ওইসব পরিবারের শোক মুছে ফেলা যাবে না। অপরাধীরা শাস্তি পেলে কিছুটা হলেও তারা শান্তি পাবে। তাই দ্রুত বিচারের রায় কার্যকরের দাবি জানান তিনি।
হামইচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহযোগিতায় ওই পরিবারগুলো ভালো ভাবে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পেয়েছে। এরপরও বিভিন্ন সময়ে নিহতদের পরিবারের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছে আওয়ামী লীগ নেতারা। তাই তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ওই মামলার রায় দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
শরীফুল ইসলাম/এমএএস