গাভির দুধে সমৃদ্ধ হচ্ছে দুই ইউনিয়নের অর্থনীতি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। হাওরবেষ্টিত এ দুই ইউনিয়নের লোকজন কৃষিকাজের পাশাপাশি পালন করেন গাভি। গাভির দুধ বিক্রি হয় স্থানীয় অরুয়াইল বাজারে। তিতাসের তীর ঘেঁষে অবস্থিত এ বাজারটিতে বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকার দুধ বেচাকেনা হয়। দুধ বিক্রি করে কৃষি পরিবারগুলো যেমন অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছে, তেমনি সমৃদ্ধ হচ্ছে প্রত্যন্ত দুই ইউনিয়নের অর্থনীতিও।
অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী নাসিরনগর উপজেলার ধানতলিয়া ও বড়নগর গ্রাম থেকেও দুধ আসে অরুয়াইল বাজারে। এসব দুধের অর্ধেকই যায় অরুয়াইল বাজারের বিভিন্ন মিষ্টান্ন ও চায়ের দোকানগুলোতে। আর বাকি দুধ যায় বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন ২০০-২৫০ জন বিক্রেতা দুধ নিয়ে আসেন অরুয়াইল বাজারে। বাজারের উত্তর ও দক্ষিণ অংশে দুই ভাগে সারিবদ্ধভাবে দুধ নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে দুধের বেচাকেনা। সব মিলে গড়ে প্রতিদিন ১২০০ লিটার দুধ বিক্রি হয়। প্রতি কেজি দুধ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। সে হিসেবে বছরে অরুয়াইল বাজারে প্রায় আড়াই কোটি টাকার দুধ বেচাকেনা হয়।
অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার দুধ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। একেকটি পরিবার প্রতিদিন ৩-৫ লিটার করে দুধ বিক্রি করেন। অরুয়াইল বাজারের পাশাপাশি গ্রামের বিভিন্ন এলাকায়ও দুধের হাট বসে।
বিজ্ঞাপন
পাকশিমুল ইউনিয়নের বড়ইছড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মনসুর আলী জানান, বাড়ির জন্য তিনি অরুয়াইল বাজার থেকে প্রতিদিন ১ লিটার করে দুধ কেনেন। যেদিন দাম কিছুটা কম থাকে, সেদিন কয়েক লিটার দুধ কেনেন। এখানকার দুধ পুরোপুরি খাঁটি। এ দুধে কোনো ভেজাল নেই।
বড়ইছড়া গ্রামের দুধ বিক্রেতা লিয়াকত আলী জানান, কৃষিকাজের পাশাপাশি তিনি দুটি গাভি পালন করেন। প্রতিদিন দুটি গাভী প্রায় ৮ লিটার দুধ দেয়। ঘরের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে প্রতিদিন গড়ে ৫ লিটার দুধ বিক্রি করেন। দুধ বিক্রি করে তার পরিবারে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এসেছে বলে জানান তিনি।
অরুয়াইল ইউনিয়নের অরুয়াইল গ্রামের তিতাস ডেইরি ফার্মের পরিচালক সোহেল ভূইয়া বলেন, ‘আমার খামারে এখন ৩০টি গাভি রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি গাভি থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০ লিটার দুধ পাওয়া যায়। আমার খামারের দুধ অরুয়াইল বাজারের একটি মিষ্টান্ন দোকানে দেওয়া হয়। দুধ বিক্রি করে প্রতি মাসে সকল খরচ বাদ দিয়ে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়’।
অরুয়াইল ইউনিয়নের রাণীদিয়া গ্রামের নাহিদা ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ফার্মের তিনটি গাভি দিনে প্রায় ৫০ লিটার দুধ দিচ্ছে। এই দুধ বিক্রিই আমার আয়ের একমাত্র উৎস। প্রতিদিন আমার সব খরচ বাদ দিয়ে ১ হাজার টাকা আয় হয় দুধ বিক্রি করে। গাভিগুলোকে প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়। সেজন্য দুধের স্বাদ ও গুণগত মান ভালো হয়। তবে করোনাভাইরাসের কারণে আগের তুলনায় এখন দুধের বেচাকেনা কিছুটা কম’।
অরুয়াইল বাজারের ইজারাদার মো. শাহাজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ২০০ বছর আগে অরুয়াইল বাজারের উৎপত্তি হয় বলে বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছি। আমাদের প্রত্যন্ত এ বাজারে প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১২০০ লিটার দুধ বেচাকেনা হয়। তবে বাজারে বসে বিক্রির জন্য দুধ বিক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। বাজারে বিক্রেতাদের কোনো ধরনের সমস্যা হলে আমরা সেটি সমাধান করি।
এসপি