স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে অবৈধ ডায়াগনস্টিক
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের মাত্র ৪ থেকে ৫ গজের মধ্যে গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকেই নিয়মবহির্ভূতভাবে গড়ে উঠেছে নিরাময় ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এত নিকটে অবৈধ উপায়ে গড়ে ওঠা এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছিল অনুমোদনও।
যদিও এটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর আর পায়নি নবায়ন। তবু স্বাস্থ্য বিভাগকে ম্যানেজ করেই প্রতিষ্ঠানটি দিব্যি চলছে এবং চিকিৎসার নামে রমরমা বাণিজ্য করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
বিজ্ঞাপন
খোদ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার চোখের সামনেই প্রতিষ্ঠানটি চললেও কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, সেই প্রশ্নও সবার মনে। তবে সিভিল সার্জন আশ্বাস দিয়েছেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার।
এমনই নানা তথ্যের ভিত্তিতে সরেজমিনে দেখা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের মাত্র ৪ থেকে ৫ গজের মধ্যে গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা নিয়ম অনুযায়ী সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্তত কয়েক শ মিটারের মধ্যে করা অবৈধ।
বিজ্ঞাপন
শুধু তা-ই নয়, চোখের সামনে সেবার নামে এমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে বসলেও অদৃশ্য কারণে দেখেও দেখছেন না উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। যা নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। কিন্তু এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ সবাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডায়াগনস্টিক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এভাবে সরকারি হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনেই হাসপাতালের মাত্র কয়েক গজের মধ্যে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার করার নিয়ম নেই। তিনি কীভাবে অনুমোদন পেলেন ও ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন, সেটা কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে। তবে যেহেতু স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিয়মিত পাশেই অফিস করেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়েই যাতায়াত করেন, সেহেতু তিনি অবশ্যই বিষয়টি জানেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সবাইকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি হাসপাতালের ভেতরে এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা নিয়মিত রোগীদের বাগিয়ে আনতে কাজ করে। তারা বলেন, ভেতর থেকেই রোগীদের এখানে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্যও বলে দেওয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির একসময় নিবন্ধন করা থাকলেও তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। পরবর্তীতে আর নবায়নও করা হয়নি।
এ বিষয়ে নিরাময় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মো. মাহাবুবুর রহমান লিটন ঢাকা পোস্টের কাছে দাবি করেন, আমার নিবন্ধন আছে এবং এসব বিষয় দেখার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ এবং উল্লাপাড়া হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতি আছে। আপনার প্রয়োজন হলে তাদের সঙ্গে কথা বলুন।
উল্লাপাড়া হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিবলী ইসলাম কবিতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু নির্দিষ্ট একটা জায়গার মধ্যে ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা যাবে না, এ রকম নিয়ম আছে। সে ক্ষেত্রে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জন যেহেতু আছেন, তাদের বিষয়টি দেখা উচিত।
তিনি বলেন, তারা বিষয়টি কেন দেখছেন না, এটা আমার বোধগম্য নয়। তারপরও আমি আমাদের সামনের মিটিংয়ে এই বিষয়টি উত্থাপন করব ও তাদের সেখান থেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি সরিয়ে নিতে আহ্বান জানাব।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেনের কার্যালয়ে গেলে তিনি দেখা করতে রাজি হননি। পরে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার সঙ্গেই সঙ্গেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পুনরায় একাধিকবার কল দিলেও তিনি আর ধরেননি।
সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. রাম পদ রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত। এমনটা হয়ে থাকলে আমি অবশ্যই খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
শুভ কুমার ঘোষ/এনএ