মরিচ গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক দোয়াল্লিন

২০০৩ তিন সালে পরিবারের ওপর অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন কৃষক দোয়াল্লিন মোল্লা। এরপর থেকে নিজের দেড় বিঘা জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগিয়ে একই জমিতে তিন ফসলের আবাদ করে বদলে গেছে কৃষক দোয়াল্লিন মোল্লার ভাগ্য।

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহের হাটখোলা গ্রামের কৃষক দোয়াল্লিন মোল্লা। আগাছা দমন ও আদ্রতা ধরে রাখতে ব্যবহার করেন মালচিং পেপার, কলার মোচাতে ব্যবহার করেন ব্যাগিং প্রযুক্তি, রয়েছে পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ। প্রশিক্ষিত আধুনিক কৃষক হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। এবার একই জমিতে এক সঙ্গে তিনটি লাভজনক ফসল আবাদ করে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

দোয়াল্লিন মোল্লা বলেন, জমিতে একই ফসল আবাদ না করে বিভিন্ন রকমের ফসল আবাদ করছি। একটা জমিতে যেমন আছে লাউ, আবার অন্য জমিতে মাশকলাই, আলু, বেগুন। আর ২৫ শতক জমিতে আবাদ করেছি এক সঙ্গে তিন ফসল।

তার ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, একই জমিতে তিনটি ফসল আবাদ করেছেন। কয়েকজন কৃষি শ্রমিক মরিচ তুলছেন আর দোয়াল্লিন মোল্লা কলার মোচায় ব্যাগিং করছেন। প্রতি সারি কলা গাছের মাঝ বরাবর সবুজ কার্পেটের মতো একাঙ্গী।

দোয়াল্লিন বলেন, এ বছর চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে নিজে ঝুঁকি নিয়ে কলা, মরিচ ও একাঙ্গী আবাদ শুরু করি। প্রথমে মনে হচ্ছিল তিনটি ফসল এক সঙ্গে হবে না। এখন দেখছি সবগুলোই ভাল হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করা হয়ে গেছে, আরও বিক্রি হবে। ৫০-৬০ মণ একাঙ্গী পাওয়া গেলে ২ হাজার টাকা মণ হিসেবে সেখান থেকে ১ লাখ টাকার বেশি বিক্রি হবে। কলা বিক্রি করে প্রায় ২ লাখ টাকার বেশি পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। কলা গাছের চারা বিক্রি করেও পাওয়া যাবে ১৫-২০ হাজার টাকা।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ হাটখোলা বাজারের আনোয়ার হোসেন মোল্লার ছেলে দোয়াল্লিন মোল্লা। কৃষি পরিবারের সন্তান হওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে যুক্ত থাকেন তিনি। ২০০৩ সালে পরিবার থেকে পৃথক হন তিনি। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দেড় বিঘা জমি নিজের ভাগে পড়ে। সেই থেকে পথচলা শুরু। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

বর্তমানে তিনি ৮ বিঘা জমির মালিক এবং সব জমিতে তিনি বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ করছেন। চলতি মৌসুমে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, আলু, রসুন, একাঙ্গী, মরিচ, করল্লা, মাস কলাই, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ফিলিপাইনের গেন্ডারি আবাদ করেছেন দোয়াল্লিন মোল্লা। শুধু সবজির আবাদ করেই থেমে থাকেনি তিনি। তার জমিতে আছে আম, কাঁঠাল, লিচু মেহগনির গাছ।

দোয়াল্লিন মোল্লা আরও বলেন, আমি ফসলে কোনো কিটনাশক ব্যবহার করি না। চলতি মৌসুমে একই জমিতে ৩টা ফসল আবাদ করে প্রায় ১০ লাখ টাকা লাভ করেছি। আলু উঠলে পটল আবাদ করা হবে বলে জানান তিনি।

দোয়াল্লিন একই জমিতে বিষমুক্তভাবে তিন ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন

এলাকাবাসীরা জানান, দোয়াল্লিন মোল্লা একই জমিতে তিনটি ফসল আবাদ করে লাভবান হয়েছে। তিনি কোনো কীটনাশক ব্যবহার করেন না। তার দেখে এলাকার বিভিন্ন কৃষকও ঝুঁকছেন দোয়াল্লিনের মতো ফসল আবাদে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, একই জমিতে এক সঙ্গে তিনটি ফসল বিষমুক্তভাবে আবাদ করেছেন দোয়াল্লিন মোল্লা। এটা ইতোমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। আমি তার ফসলি জমি পরিদর্শন করেছি।

তিনি আরও বলেন, দোয়াল্লিন মোল্লার সবজি ক্ষেত থেকে মূল রাস্তায় আসার জন্য একটি পাকা রাস্তার প্রয়োজন। আমি তালিকায় তার নাম দিয়েছি। বরাদ্দ আসলে তার জন্য পাকা রাস্তা করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তাকে সরকারিভাবে সহযোগিতাও করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলী হাসান বলেন, চুয়াডাঙ্গায় বছরে প্রায় ১৬শ ৬৩ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়ে থাকে। যাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান আছে তারা কলা আবাদের জমিতেই কয়েকটি ফসল আবাদ করছেন। তবে একটি প্যাটার্ন (এক ধরনের মাল্টি লেয়ার মিক্সড ক্রপিং টেকনিক-যেখানে একাধিক ফসল একই জমিতে একই সময়ে চাষ করা হয়) খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। কলা বাগানের মধ্যে মরিচ ও একাঙ্গী চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। 

তিনি আরও বলেন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষকরা যেন এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন সেজন্য তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে একদিকে যেমন কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি বর্ষাকালে মরিচের সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। 

এসপি