ভাতের প্রতি নির্ভরশীলতা মেধাবী জাতি গঠনের পথে অন্তরায়
ভাতের প্রতি নির্ভরশীলতা স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠনের পথে অন্তরায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজশাহীতে ‘প্রোটিন ফর অল’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এ কথা জানান। একই সঙ্গে ভাতের পরিমাণ কমিয়ে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ তাদের।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর একটি অভিজাত হোটেলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি), ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশন যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
বিজ্ঞাপন
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, শিশু ও প্রবীণদের জন্য প্রোটিন খুবই দরকারি। স্বল্পমূল্যে ডিম ও মুরগির মাংস থেকে প্রোটিন পাওয়া সম্ভব। সঠিক প্রোটিন গ্রহণের মাধ্যমে শারীরিক বিকাশ ও সুঠাম দেহের অধিকারী হওয়া সম্ভব। প্রোটিন বিষয়ে জনমনে নানান ভুল ধারণা ও কুসংস্কার আছে। এ ব্যাপারে নেতিবাচক প্রচারও রয়েছে। প্রোটিনের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা দূর করতে হবে।
মেয়র আরও বলেন, সর্বসাধারণের জন্য, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেন স্বল্পমূল্যে ডিম, দুধ, মাছ, মাংস কিনতে পারে সে বিষয়ে কাজ করছে সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০৪১ বাঙালি জাতিকে প্রথমবারের মত উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে। আর এ ভিশনের মূলেই আছে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ এবং স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গড়ার স্বপ্ন।
বিজ্ঞাপন
সেমিনারে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের রাজশাহীর বিভাগীয় পরিচালক ড. উত্তম কুমার দাস বলেন, দেশে বর্তমানে মুরগির মাংসের মাথাপিছু বার্ষিক কনজাম্পশন প্রায় ৭ কেজির মত। দেশীয় জাতের মুরগি, গরু ও ছাগল থেকে অধিক পরিমাণ আমিষ প্রাপ্তির লক্ষ্যে এগুলোর জাত উন্নয়নের কাজ চলছে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কল্যাণ চৌধুরী বলেন, রাজশাহীতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় ডিম, দুধ, মাছ, মাংস খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। তাই আগামীতে পুষ্টিসূচকে আরও উন্নতি লাভ করবে বাংলাদেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে প্রোটিন খাদ্যের ভালো উৎস থাকা সত্ত্বেও মানসম্পন্ন প্রোটিন গ্রহণে ঘাটতি রয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যে আমিষের ঘাটতি থাকলে কোয়াশিয়রকর বা গা ফোলা রোগ হয়। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মেধা ও বুদ্ধি কমে যায়। তাই আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। করোনার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন এই পুষ্টিবিদ।
সাজেদা ফাউন্ডেশনের পুষ্টিবিদ ইশরাত জাহান বলেন, শতকরা ৬০ ভাগেরও অধিক আমিষ আমরা গ্রহণ করে থাকি বিভিন্ন প্রকার শর্করা জাতীয় খাবার থেকে। ওই ধরনের আমিষে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিডের ঘাটতি থাকায় সুষম আমিষ গ্রহণ থেকেও অনেকে বঞ্চিত হন।
বিপিআইসিসির সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, উন্নত বিশ্বের মানুষ বছরে মাথাপিছু যেখানে ৪০-৪৫ কেজি মুরগির মাংস খায়, সেখানে আমরা খাই মাত্র ৭ কেজির মত। এ পরিমান অন্তত দ্বিগুণ করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
সেমিনারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ও হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ মোট প্রায় ১৪০ জন অংশ নেন।
অনুষ্ঠান শেষে পোল্ট্রি কুকিং কনটেস্টে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পোল্ট্রি কুকিং কনটেস্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন মুমতাহিনা জেফরিন অন্তি। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছেন যথাক্রমে আনিকা তামান্না ও সাবা রহমান। চ্যাম্পিয়নকে ৩০ হাজার টাকা, প্রথম রানারআপকে ২০ হাজার ও দ্বিতীয় রানারআপকে ১০ হাজার টাকা প্রাইজমানি দেওয়া হয়।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর