মাত্র কয়েক মিনিট বৃষ্টি হলেই স্কুলের পুরো মাঠ ও আঙিনায় তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। পুরো গ্রামের পানি এসে জমা হয় স্কুলে, তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। এমন দুর্ভোগে রয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের চৌডালা ইউনিয়নের হাউসনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, পুরো হাউসনগর গ্রামের বৃষ্টির পানি স্কুলের পাশে থাকা একটি সরকারি ডোবাতে এসে জমতো। কিন্তু কয়েক মাস আগে মহানন্দা নদী ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বালু দিয়ে ডোবার গর্ত পূরণ করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এই কাজটি বাস্তবায়ন হয়। ফলে গর্ত পূরণ হয়ে গেলে গ্রামের বৃষ্টির পানি স্কুলের মাঠ ও বারান্দায় এসে জমে।

দেড় বছর পর ১২ সেপ্টেম্বর দেশে স্কুল খোলা হলেও হাউসনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস হয়নি। দুই দিন পর পানি কমে গেলে চালু হয় পাঠদান কার্যক্রম। কয়েকদিন আগে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র স্কুলে আসার পথে পানিতে পড়ে বই-খাতা সবকিছু ভিজে নষ্ট হয়।

বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও স্থানীয়রা বলছেন, গ্রামের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করেই ডোবা ভরাট করার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে স্কুলের পাশের কয়েকটি বাড়িও জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।   

সহকারী শিক্ষক মুক্তারা খাতুন বলেন, স্কুল বন্ধের সময়ে অনেকের মুখে শুনেছি আমাদের স্কুল পানিতে ডুবে আছে। স্কুলে এসে দেখি ঘটনা সত্য। অথচ স্কুল বন্ধের আগে পরিস্থিতি এমন ছিল না। বৃষ্টি হলেও মাঠে বা বারান্দায় পানি জমতো না। অপরিকল্পিতভাবে গর্ত ভরাট করার কারণে এমনটা হয়েছে।

ছাত্র শিমুল রানা জানান, খোলার পর এসে দেখি হাঁটুপানিতে ডুবে আছে আমাদের স্কুল। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। ক্লাসে যেতে হলে হাঁটুপানি পেরোতে হবে। স্কুল খোলার দ্বিতীয় দিনে আমার বন্ধু স্কুলে আসার পথে মাঠে পানিতে পড়ে যায়।

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ইসমোতারা খাতুনের মন খারাপ মাঠে খেলতে না পাওয়ায়। সে জানায়, এক সপ্তাহে বৃষ্টি হয়নি, তাই স্কুলের মাঠ বা বারান্দায় পানি জমে নেই। কিন্তু পুরো মাঠজুড়ে জমে থাকা পানির কারণে পিচ্ছিল হয়ে আছে। আমরা যাতে খেলতে গিয়ে পড়ে না যাই, তাই স্যারেরা খেলতে মানা করেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারী বর্ষণেও ৩ দশক ধরে এই স্কুলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। অথচ এখন কয়েক মিনিট বৃষ্টি হলেই গ্রামের সমস্ত পানি এসে জমা হয় স্কুলের মাঠ ও আঙিনায়। এতে স্কুলের পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে।

চৌডালা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম জানান, স্কুলের পাশে থাকা একটি ডোবা ভর্তি করার কারণে স্কুলে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। ডোবাটি সরকারি রাস্তা হওয়ার নদী ড্রেজিংয়ের বালু পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ভরাট করা হয়েছে। স্কুলের জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রয়োজনে স্কুলের মাঠেও ভরাট করে উঁচু করে দেওয়া হবে, যাতে পানি আসতে না পারে। 

গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জলাবদ্ধতা নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল। পরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে পরবর্তী সময়ে এডিবির বরাদ্দ আসলেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার সিধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

জাহাঙ্গীর আলম/এমএসআর